কসাই ডাক্তারের ভুলে প্রাণ গেলো দু’শিশুর ॥ ডায়াগনস্টিক বন্ধ
টাকার বিনিময় সমাধান করলেও কি ধায় শেষ?
আমার কণ্ঠ রিপোর্ট
মাত্র ২/৩ মিনিটেই ৫/৭শত টাকা। এতো অল্প সময়ে বাংলাদেশের টাকা আয় করা কঠিন। কিন্তু কঠিন হলেও সত্য। আর এটা শুধু ডাক্তারদেরে দ্বারাই সম্ভব। তাও আবার এই টেস্ট,ঐ টেস্ট এর কমিশনতো আছেই। আবার সিজারিয়ান হলে নগদে ৩/৪ হাজার টাকা। টাকায় আর টাকা। ডাক্তারদের মাথা খারাপ থাকার কথা। কারণ টাকার লোভ যাদের আছে তারাতো দ্রুত শেষ হয়। তার মধ্যে ডাক্তাররা অন্যতম। আর এর জন্য প্রধান অপরাধী ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের মালিকরা। গত এক সপ্তাহে ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জে দুটি শিশুকে হত্যা করেছে কসাই ডাক্তাররা। তাও আবার একটি শিশুকে পৃথীবির আলো দেখতে দিলো না। আরেকটা শিশু মাত্র দু বছরের। কম শিক্ষিত ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিলে বড় ডাক্তার বলে সে কি জানে। আর বেশি শিক্ষিত ডাক্তারের কাছে গেলে বলে সাটিফিকেটধারী শিক্ষিত। এখন যারা রোগী তারা কার কাছে গেলে সুচিকিৎসা পাবে?
ফরিদগঞ্জে হাসপাতাল থেকে পেটের নাড়ি ভুড়ি কলিজা বের হওয়া অবস্থায় স্বজনদের হাতে নবজাজতের লাশ প্যাকেট করে তুলে দেয়ার ঘটনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার রাতে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ সেন্ট্রাল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। নবজাতক শিশুটির বাড়ি উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম দায়চারা গ্রামে। ঘটনার ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানায় ডাঃ মাহমুদা বেগমকে অভিযুক্ত করে শিশুটির নানী সাজেদা বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের হয়েছে (নং- ২১। তাং ২৩/৩/২০১৭)।
নবজাতকের নানী সাজেদা বেগম জানান, তার মেয়ে খাদিজা (২০) এর প্রসব বেদনা উঠলে বুধবার রাতে একজন সিনিয়র ভিজিটরের পরামর্শ মতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। রোগীর অবস্থা গুরুতর বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত সিজারের পরামর্শ দেয়। পরে রাত ১১টায় খাদিজার সিজারিয়ান অপারেশন হয়। হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক ডাঃ মাহমুদার সিজারিয়ান অপারেশন করেন বলে সাজেদা বেগম জানান। সিজারিয়ান অপারেশন শেষে হাসপাতালে কর্মকর্তারা শিশুটি মৃত ভুমিষ্ট হয়েছে বলে জানিয়ে প্যাকেটজাত অবস্থায় শিশুটির লাশ দ্রুত তাদের কাছে দিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। সকালে শিশুটিকে দাফন করার জন্য প্যাকেট খুললে দেখতে পান ভিন্ন চিত্র। নবজাতকের পেটের নাড়ি ভুড়ি ও কলিজা বের হওয়া। পাশে পড়ে রয়েছে সিজারের কাজে ব্যবহৃত কাচিসহ আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি। পরে তারা শিশুটিকে ফরিদগঞ্জ থানায় নিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বেলাল জানান, রাতে কি হয়েছে তা তিনি জানেন না। সকালে এসে তিনি ঘটনা জানতে পারেন। ঘটনার ব্যাপারে জানতে ডাঃ মাহমুদার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠো ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, শিশুটি জন্ম হওয়ার সময় পরিপূর্ণতা নিয়ে আসেনি। তার পেটের ওয়াল ছিল না। ফলে পেটের ভিতরের সব কিছু বের হয়ে গেছে।
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি শাহ্ আলম জানান, ঘটনার ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানায় ডাঃ মাহমুদা বেগমকে অভিযুক্ত করে শিশুটির নানী সাজেদা বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের হয়েছে।
পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, শিশু মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে এসেছেন। অপরাধ হয়ে থাকলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাজীগঞ্জ
হাজীগঞ্জে হাতুড়ে ডাক্তারের ভূল চিকিৎসায় নিহত দুই বছরের শিশু মোঃ ইমন হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টায় উপজেলার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের পাতানিশ গ্রামের পন্ডিত বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এ দিকে শিশু নিহতের ঘটনায় কথিত ডাক্তার বাবুলাল দত্ত পালিয়েছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে। বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবুলাল দত্তের চেম্বার দত্ত ফার্মেসী এন্ড মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিও পাওয়া যায়। স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা জানান, আজ (বুধবার) ২২মার্চ ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি খোলা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিশু নিহতের ঘটনায় শিশুর পরিবারের সাথে সমঝোতা করেছেন কথিত ডাক্তার বাবুলাল দত্তের লোকজন। মঙ্গলবার সমঝোতা শেষে রাত ১০টায় শিশুটিকে দাফন করা হয়। এর আগে সমঝোতার অপেক্ষায় শিশুটিকে দাফন করা হয়নি বলে তারা জানান।
স্থানীয় অসমথির্তত সূত্রে আরো জানা যায়, দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে সমঝোতা হয়েছে কথিত ডাক্তারের লোকজনের সাথে। শিশুটির পরিবারের হাতে আজ বৃহস্পতিবার সমঝোতার টাকা তুলে দেয়া হবে অথবা টাকা পরিশোধে বিষয়ে সিদ্বান্ত গ্রহন করা হবে। এ বিষয়ে বাবুলাল দত্তের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। শিশুটির পরিবারও সমঝোতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন, তবে লেন-দেনের কথা তারা অস্বীকার করেন।
উল্লেখ্য মঙ্গলবার হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন বলাখাল দত্ত ফার্মেসী এন্ড মেডিকেয়ার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের শিশু ইমনকে নিয়ে আসে তার পিতা-মাতা। শিশুটির স্বর্দি-কাঁশ থাকায় কথিত ডাক্তার বাবু লাল দত্তের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। প্রথমে শিশুকে গ্যাস (নেবুলাইজার) দিয়েছেন। তারপর শিশুটিকে একটি ইনজেকশান পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার সাথে সাথেই শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বাবুলাল শিশুটিকে মৃত বুঝতে পেরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার করে। শিশুটিকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার ইমনকে তাকে মৃত ঘোষনা করে। এরপর বাবুলাল দত্ত পালিয়ে যান এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও গতকাল বুধবার পর্যন্তবন্ধ পাওয়া যায়।