কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়ন পরিষদ বিভাজনকে কেন্দ্র করে দু-পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে অফিস করতে পারছেন না ইউপি চেয়ারম্যান শাহ সেলিম প্রধান। ইউনিয়ন যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মহড়ার কারণেই ওই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি ইউনিয়নবাসীর।
জন্ম-নিবন্ধন, নাগরিক ও জাতীয়তা সনদ, ওয়ারিশ সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জন্য চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ইউনিয়নবাসী। ভোগান্তি লাঘবে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে সোমবার (২৬ অক্টোবর) সকালে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা ঝুলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে দীর্ঘ প্রায় এক মাস ধরেই চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা ঝুলছে। ইউপি সচিব অফিস করলেও সময়মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সনদ পায় না ইউনিয়নবাসী। এছাড়া বিদেশগামীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
কালেমশার গ্রামের মো. কামাল হোসেনের স্ত্রী শিরিনা আক্তার বলেন, ‘আমি দুই দিন যাবত আমার মেয়ের জন্মনিবন্ধন করতে এসে ইউনিয়ন পরিষদ বন্ধ পাচ্ছি। অনেক বড় ইউনিয়ন দূর থেকে এসেছি কিন্তু কাজটি শেষ করতে পারিনি।’
ওই ইউনিয়নের মেহার গ্রামের মো. মজিবুর রহমান প্রধান জানান, ‘ইউনিয়ন বিভাজনের সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। প্রতিপক্ষের লোকজন চেয়ারম্যানকে হত্যা করার চেষ্টা করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই চেয়ারম্যান অফিস করুক। অনেক বিদেশগামীরাই কাগজপত্রের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে এসে ফিরে যায়। তারাও বিপদে আছে।’
বদরপুর গ্রামের মো. হোসেন, মো. মহিউদ্দিন মহিন, মেহার গ্রামের মো. ইউনুস প্রধান বলেন, আমরা চেয়ারম্যানের সমর্থক হওয়ার কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন বিভিন্ন সময় আমাদেরকে মোবাইলে হুমকি-ধমকি দেয়। আমরা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। এই ইউনিয়নে যে কোন সময় বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যার পরিকল্পনাও করছে। মীমাংসার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না বলে দাবি করেন তারা।
ওই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘২৯ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের বিভাজন নিয়ে একটি সভা ইউনিয়ন কমপ্লেক্সের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় চেয়ারম্যানের বক্তব্য চলাকালে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ খান সেন্টু নামের একজন ভেটু দেন। এতে চেয়ারম্যান পক্ষের সাথে সেন্টুর লোকজনের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে তারা চেয়ারম্যানের উপর হামলার চেষ্টা করে। এসময় দফাদার ও গ্রাম পুলিশ সহ আমরা চেয়ারম্যানকে ইউনিয়ন কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে রেখে দরজা বন্ধ করে দেই। তারা দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করে। দফাদার সহ ৪-৫ জনকে মেরে রক্তাক্ত করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চেয়ারম্যানের গাড়িও ভাঙচুর করে চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষের লোকজন। এরপর থেকে চেয়ারম্যান আর ইউনিয়ন পরিষদে আসতে পারছেন না।’
১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. রৌশন আলী বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে প্রায়ই বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ইউনিয়ন কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেয়। আমরা এই এলাকায় শান্তি চাই।’ স্থানীয় সংসদ সদস্য চাইলেই বিষয়টি সমাধান করতে পারেন বলে দাবি করেন তিনি।
ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বাবুল বলেন, ‘ইউনিয়ন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতা বদরপুর বাজারে সশস্ত্র মহড়া দেয়। আমার উপরও তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। বাজারের ব্যবসায়ীরাও আতঙ্কে রয়েছে। চেয়ারম্যান না থাকায় সাধারণ মানুষ হয়রানি হচ্ছে।’
এব্যাপারে ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ খান সেন্টু বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব বক্তৃতায় আওয়ামীলীগকে নিয়ে কটূক্তি করেন। আমি বাঁধা দিলে উনার লোকজন আমার উপর হামলা চালায়। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে। তিনি জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদে অফিস করবেন এটাই স্বাভাবিক। আমি আমার উপর হামলার বিচার চাই।’
এব্যাপারে মাইজখার ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি জাহিদ হাসান জয় বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ করি। আমরা ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে সন্ত্রাসী নিয়ে মহড়া দেই বলে যে অভিযোগ তারা তুলেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল সাহেবকে আমি শ্রদ্ধা করি। উনার উপর হামলার পরিকল্পনার কথাটিও বানোয়াট।’
মাইজখার ইউপি চেয়ারম্যান শাহ সেলিম প্রধান বলেন, ‘২৯ সেপ্টেম্বরের আমার উপর হামলা হয়। আমার ৬ জন সমর্থকদের মারধর করে। অফিস, চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে। আমার ব্যক্তিগত গাড়ি অন্য স্থানে গিয়ে ভাঙচুর করে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে মহড়া দেয়। আমি জীবন ঝুঁকিতে রয়েছি। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদে অফিস করতে পারছি না।’ এসময় তিনি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘবে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেন।
এব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন’ সংঘর্ষের ঘটনা আমি জানি। অফিসে যায় না এ বিষয়টি এইমাত্র শুনলাম। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’