আপনার গতিবিধি কি ভিডিও ক্যামেরায় রেকর্ড করা হচ্ছে? ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা এবং ক্যামেরাযুক্ত মুঠোফোনের বদৌলতে সেটা খুব সহজেই সম্ভব। কারণ, এসব প্রযুক্তি এখন খুবই সহজলভ্য। তাই প্রশ্নের উত্তরটি হবে, হ্যাঁ। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গুগল গ্লাসের মতো প্রযুক্তি, যার কারণে মানুষ জেনে বা না জেনে নজরদারির আওতায় থাকছে।
সহজে বহন করা যায় কিংবা ব্যবহার করা যায় এমন পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের প্রসারের ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিষয়টি বেশ স্পষ্ট। এসব প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ, গুগল গ্লাস ইত্যাদি। কিন্তু এ প্রযুক্তির প্রভাবে দৈনন্দিন জীবনে মানুষের আচার-আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে বলে মনোবিজ্ঞানীরা শনাক্ত করেছেন। কারণ, স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের আচরণ এবং ভিডিও রেকর্ডারের সামনে আচরণের মধ্যে তফাত রয়েছে। যখন কেউ জানতে পারেন, তাঁকে ভিডিও করা হচ্ছে এবং ক্যামেরা, কম্পিউটার, চোখের নড়াচড়া শনাক্তকারী যন্ত্র এবং সংবেদী (সেনসর) অনেক যন্ত্রপাতির সামনে তিনি স্বভাবতই বাড়তি সচেতনতা অবলম্বনের চেষ্টা করতে পারেন। কেউ কেউ হয়তো পেশাগত কারণে ক্যামেরার সামনে অবস্থান করতে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে স্বাভাবিক থাকতে পারেন, কিন্তু সে রকম পরিস্থিতিতে অধিকাংশ মানুষের আচরণেই ব্যতিক্রম দেখা যাবে। আর এ পরিবর্তনের বিষয়টি মনোবিজ্ঞানীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় গবেষণার বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক এলেনি ন্যাসিওপোলাস ও অ্যালান কিংস্টোন, ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভান রিস্কো এবং যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের টম ফউলশ্যাম একাধিক অনুসরণযন্ত্র ব্যবহার করে একদল স্বেচ্ছাসেবীর ওপর একটি গবেষণা চালান। তাঁদের একটি কক্ষে রাখা হয়, যেখানে এক স্বল্পবসনা নারীর ছবি দেয়ালে টাঙানো ছিল। যখন স্বেচ্ছাসেবকেরা নিশ্চিত ছিলেন যে তাঁদের গতিবিধি ক্যামেরায় ধারণ করা হচ্ছে না, তখন তাঁরা ইচ্ছেমতো সেই ছবির দিকে তাকিয়েছেন এবং নির্দ্বিধায় স্বাভাবিক আচরণ করেছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে যখন তাঁরা গুগল গ্লাসের মতো চোখের গতিবিধি শনাক্তকারী যন্ত্র পরিধান করেন বা ভিডিও ধারণের যন্ত্রের মুখোমুখি হন, তখন তাঁদের আচরণ অনেক সংযত হয়ে যায়। দ্বিতীয় পরিস্থিতিতে তাঁদের আচরণ স্বাভাবিক নয় এবং তাঁরা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও একটি আবেদনময় ছবির দিকে তাকানো থেকে বিরত ছিলেন।
অন্য কথায়, তাঁরা সচেতনভাবে নিজেদের আচরণ বদলে ফেলেছিলেন। ক্যামেরার সামনে অসংযত আচরণ এড়ানোর চেষ্টায় মানুষ সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার ব্যাপারে সচেতন থাকে। নিরাপত্তাকাজে ব্যবহৃত সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো এভাবেই মানুষের আচরণের ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করছে। মনোবিজ্ঞানীরা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন। তাঁদের ওই গবেষণা প্রতিবেদন ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, আচরণ ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণকারী যন্ত্রপাতির মুখোমুখি হওয়ার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষ নিজেদের আচরণ পাল্টে ফেলতে পারে। আবার সেই যন্ত্রপাতি বন্ধ করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা আবার স্বাভাবিক আচরণে ফিরে যেতে পারে। যেমন: স্বেচ্ছাসেবকেরা সেই কক্ষে রাখা ছবিটির দিকে আবার আগ্রহভরে তাকাতে পারেন, এই ভেবে যে তাঁদের সেই আচরণ ক্যামেরায় রেকর্ড হচ্ছে না।
গুগল গ্লাস বা অন্য স্মার্ট যন্ত্রপাতির যুগে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কতটা লঙ্ঘন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা। তাঁরা দেখতে পান, আধুনিক যুগের মানুষ ক্যামেরাসহ ভিডিও ধারণকারী যন্ত্রপাতির সামনে নিজেদের উন্মুক্ত থাকার বিষয়টি কখনো কখনো ভুলে যেতে পারেন। আর তখনই তাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সম্ভাবনা বা আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে মানুষের স্বাভাবিক আচার-আচরণ শনাক্ত করতে চাইলে এসব যন্ত্রপাতি বেশ কার্যকর, এ কথা মানতেই হয়।