চির অম্লান বঙ্গবন্ধু
শোকের মাসের ১২তম দিন আজ। জাতির জীবনের কালো দিন সমাগত। বাঙালি জাতির জীবনে এ কালো অধ্যায়ের সূচনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এদিন স্বাধীনতার রূপকার, জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন সে হত্যার বিচারের পথও রুদ্ধ করে রাখে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। চলে ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা। তার সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাজাতেও বাধা দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নস্যাৎ করতে রাষ্ট্রের অনেক বৈশিষ্ট্য পাল্টে পাকিস্তানি আদলে গড়ে তোলা হয়।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ল্য, উদ্দেশ্য, চেতনা, বিশ্বাসকে নস্যাৎ করার এ অপচেষ্টার পুরোটাই ভেস্তে যায়, যখন আমরা দেখতে পাই- বিবিসির জরিপে রবীন্দ্রনাথ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানীর মতো ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধুই নির্বাচিত হন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তার সাত মার্চের ভাষণ পায় বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি।
বস্তুত বাঙালি, বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু সমার্থক। তিনটি শব্দ একই সুতোয় গাঁথা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বাঙালিকে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে পরিচিত করতে, বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে। সেখানে তিনি পুরোপুরি সফল। তার কল্যাণেই আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ, একটি মানচিত্র, একটি পতাকা। আর এ কারণেই তিনি বাংলার মহানায়ক। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। জাতির পিতা। তিনি বাঙালি জাতির ইতিহাসে চির অম্লান।
কিন্তু এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দোসররা। বঙ্গবন্ধুর নাম এ দেশ থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টার পাশাপাশি তার গৃহীত পদপেগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশ বেতারের নাম পাল্টে রেডিও বাংলাদেশ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে পাকিস্তানি আদলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগানের প্রচলন করা হয়। অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকতার ঘেরাটোপে বন্দি করে ফেলা হয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের জায়গা দখল করে নেয় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। ধর্মনিরপেতার স্থলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হয়। রাজনীতিতেও আবির্ভাব হয় পাকিস্তানপন্থীদের। সরকার ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসেন পাকিস্তানি ভাবধারা লালনকারী এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা। স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্রই বদলে ফেলার উদ্যোগ নেয়।
এভাবেই চলে ২১টি বছর। এরপর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার দল আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ১৯৯৬ সালে। আস্তে আস্তে স্বরূপে ফিরতে থাকে বাংলাদেশ। ফিরে আসতে থাকে অসাম্প্রদিয়ক-গণতান্ত্রিক চরিত্র। যা চলছে এখনও।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিভিন্ন বক্তব্যে একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন। সেটি হল- একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র গড়তে, দেশকে উন্নত করে তুলতে যা যা দরকার বঙ্গবন্ধু তার সব পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। বাস্তবায়নও শুরু করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছিলেন। প্রশাসনিক পুনর্গঠন শুরু করেছিলেন। গঠন করেছিলেন পরিকল্পনা কমিশন। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের জন্য এ খাতে এক ঝাঁক কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। টেকসই উন্নয়নের ল্েয ঘোষণা করেছিলেন প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। তার অবর্তমানে থমকে যায় দেশের উন্নয়নের পথ চলা। যা গতি পায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গঠনের পর। প্রথম দফায় বাংলাদেশে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো ফিরে পায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়। এরপর গত দশ বছরে দেশ এগিয়ে গেছে অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে। বাংলাদেশ এখন নিুমধ্যম আয়ের দেশ। দেশে-বিদেশে উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুর ুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলার পথে এগিয়ে যাচ্ছে তরতর করে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ল্েয কাজ করছে।
বলা যেতে পারে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে চলছে দেশ। ঘাতকরা তাকে খুন করলেও তার সেই আদর্শ আজ প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর দেহ ঘৃণ্য পশুরা কেড়ে নিতে পারলেও নিতে পারেনি আদর্শকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব। তাই ৪২ বছর পরও বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞতা-শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত করে বঙ্গবন্ধুকে। তারই রক্তে ধোয়া বাংলায় আবারও যুথবদ্ধ মানুষ। শ্রদ্ধায় স্মরণে পথে প্রান্তরে আজও ওঠে সেই সম্মিলিত রণধ্বনি- ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। এক মুজিব লোকান্তরে ল ল মুজিব ঘরে ঘরে।’
শোক পালনের অংশ হিসেবে আজও রাজধানীসহ সারা দেশে নানা কর্মসূচি পালিত হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শ্রমিক লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে শোকসভা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।