চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম, চাঁদপুর ॥
ব্যাপক পুলিশি প্রহরায় গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের বকশি পাটওয়ারী বাড়িতে জঙ্গি শরীফ শাহিদুল আলম বিপুলকে দাফন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে বকশি পাটওয়ারী বাড়ি প্রাঙ্গণে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা পড়ান সদরের মধ্য তরপুরচন্ডী আলী দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মাওলানা হেলাল উদ্দিন পাটওয়ারী। জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। দাফনের পর থেকে ওই এলাকায় বিরাজ করছে সুনশান নিরবতা।
ভোর সাড়ে ৪টায় ৩০ মিনিটে তার মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর দুটি গাড়ি বাড়িতে পৌঁঁছায়। তার মরদেহ কারা রক্ষীদের কাছ থেকে স্বাক্ষর দিয়ে গ্রহন করেন পিতা হেমায়েত উদ্দিন পাটওয়ারী।
নামাজে জানায়া মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মানিক, বিপুলের চাচা বাচ্চু পাটওয়ারী, কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিয়ন সেক্রেটারী জাকির হোসেন বেপারীসহ বাড়ীর লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফজাল ও জেলা বিশেষ শাখার কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান ও মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়ালি উল্লাহ ওলি মরদেহ দাফন করা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে ফাঁসি কার্যকর হওয়া মুফতি হান্নানের সহযোগী জঙ্গি শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের লাশ দাফনের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে রাতেই কবর খোঁড়া হয়। বিপুলের লাশ গ্রহণ করবে না বলে তার বাবা হেমায়েত হোসেন পাটওয়ারী মন্টু প্রশাসনকে জানিয়ে দেবার পর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে তার কবর খোঁড়া হয়। তার বাবাকে কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কাশিমপুর কারাগারে যেয়ে বিপুলকে শেষ বারের মত দেখতে যাবার অনুরোধও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। বুধবার রাতে বিপুলের ফাঁসি কার্যকর করা হলেও এনিয়ে চাঁদপুরে তার গ্রামের বাড়িতে ছিলনা কোন আলোচনা।
বিপুলের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী বকশি পাটওয়ারী বাড়ি। দু ভাই দু বোনের মধ্যে বিপুল দ্বিতীয়। তার মা জীবিত নেই। শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের বাবা হেমায়েত হোসেন মন্টু পাটওয়ারী সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় দীর্ঘকাল চাকুরি করেন। অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সিলেটেই ছিলেন। বর্তমানে মৈশাদীতে নিজ বাড়িতে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। জানা যায়, বিপুলের জন্ম সিলেটেই। সেখানেই তিনি বড় হন। সিলেট এমসি সরকারি কলেজে মাস্টার্সে প্রথম পর্বে পড়াকালীন তাকে ১৯৯৯ সালে তার বাবা লিবিয়া পাঠান চাকুরি করতে। কিন্তু বিপুল লিবিয়া না গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে অন্যত্র চলে যায়। ধারণা করা হচ্ছে ওই সময় তিনি আফগানিস্তানে কিংবা অন্যত্র গিয়ে জঙ্গি ট্রেনিং গ্রহণ করে। বিপুলের বাড়ির লোকজন জানান, বিপুল চাঁদপুরে কখনোই ছিলেন না। ছোটবেলায় বাবা মায়ের সাথে মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়ি মৈশাদী আসতো। বড় হওয়ার পর কখনো তাকে একই গ্রামে দাদার ও নানার বাড়ি আসতে দেখেনি কেউ। বিপুলের বড় বোন বর্তমানে সপরিবারে লন্ডন প্রবাসী। ভগ্নিপতি রফিকুজ্জামান হিলালী নেত্রকোনা থেকে ২০০১ সালে বিএনপির টিকেটে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আরেক বোন স্বামীর সংসারে চট্টগ্রামে আছেন। ছোট ভাই এলাকায় থাকে। প্রতিবেশিরা জানায়, জঙ্গি বিপুল পরিবারের অজান্তে সিলেটে বিয়ে করে। সে ঘরে তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে বলে শুনেছেন। এদের সাথে বিপুলের বাবার পরিবারের কারোরই কখনো কোনো যোগাযোগ ছিলো না বলে জানা যায়।