আজ,
শনিবার , ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১০ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দরাত ২:০৪
নোটিশ বোর্ড
সর্বশেষ
ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের মানব-সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে ২৮ মে শপথ নিয়েছেন স্মৃতি জুবিন ইরানি। পরের দিনই হইচই স্নাতকও নন মন্ত্রী স্মৃতি, নেহাতই দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা! বিতর্কের সেই কেঁচো খুঁড়তে খুঁড়তে বুধবার বড়সড় সাপও বেরিয়ে পড়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে যে হলফনামা দিয়েছেন স্মৃতি, অসঙ্গতি রয়েছে তাতে। অভিযোগ, এই কাজ রীতিমতো ফৌজদারি অপরাধ।
২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় স্মৃতি জানিয়েছিলেন, তিনি বিএ পাশ। অথচ ১০ বছর পর এবারের ভোটে জানাচ্ছেন, তিনি বাণিজ্য শাখায় পার্ট ওয়ান পর্যন্ত পড়েছেন। তা হলে কোনটা ঠিক?
স্মৃতি এখন রাজ্যসভার সদস্য। রাজ্যসভার ওয়েবসাইটে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে বসন্ত বিহারের হোলি চাইল্ড অক্সিলিয়াম ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন তিনি। কিন্তু তার ডিগ্রি নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই।
যদিও মন্ত্রী হতে গেলে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো মাপকাঠি নেই। স্কুলের গণ্ডিতে পা না-রেখেও মন্ত্রী হওয়া যায়। পুঁথিগত শিক্ষা না থেকেও মন্ত্রী হিসেবে সফল, এমন নজিরও রয়েছে। কিন্তু বিরোধী কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, দেশের শিক্ষামন্ত্রী উচ্চশিক্ষিত হবেন, দেশবাসী এমনটাই প্রত্যাশা করেন।
বস্তুত রাজনৈতিক সুবিধা নিতে সেই ‘প্রত্যাশা’তেই সুড়সুড়ি দিতে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। মঙ্গলবারই তাদের নেতা অজয় মাকেন টুইট করে বলেছিলেন, ‘কেমন মন্ত্রিসভা সাজিয়েছেন মোদি? মানব-সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী নিজে স্নাতকই নন!’ এর পরে আবার বুধবার কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ঠেস দিয়ে বলেন, ‘কংগ্রেস কারো ব্যক্তিগত সমালোচনা করে না। মোদির সরকারে এমন মন্ত্রীও রয়েছেন, যাদের পড়াশোনার দৌড় অষ্টম বা দশম শ্রেণী পর্যন্ত। কিন্তু মানব-সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী বলে কথা। উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা কি বর্তমান মন্ত্রীর রয়েছে? মনে রাখতে হবে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, নুরুল হাসান, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, কে সি পন্থ, কর্ণ সিংহ, মুরলীমনোহর জোশীর মতো নেতারা দেশের শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন।’ স্মৃতির দুই বার দুই রকম হলফনামা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক।
স্মৃতি অবশ্য বুধবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। সাংবাদিকদের সাথে দেখাও করতে চাননি তিনি। কিন্তু তার ঢাল হয়ে উমা ভারতী পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন সনিয়া গান্ধীর শিক্ষাগত যোগ্যতাটা আগে জানাক কংগ্রেস।
যদিও এই পাল্টা চালে বিতর্ক আদৌ চাপা পড়ল না। কারণ, হলফনামায় দায়ের করা তথ্যে অসঙ্গতি ফৌজদারি অপরাধ। আইনজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ না করলেও যে কেউ আদালতে যেতে পারেন। তখন কিন্তু মুখ পুড়তে পারে খোদ প্রধানমন্ত্রীরও।
শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষা মহলে অবশ্য দুই রকমের মত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য এম এম আনসারি গতকাল বলেন, ‘মন্ত্রী হতে গেলে ন্যূনতম শিক্ষার কোনো মাপকাঠি নেই ঠিকই। স্মৃতি ইরানি মহিলা, শিশুকল্যাণ বা গ্রামোন্নয়নের মতো কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলে হয়তো এই বিতর্কটি হতো না। কিন্তু মানব-সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সাথে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার বিষয়টি জড়িত। তাই উচ্চশিক্ষিত কোনো ব্যক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলে তিনি গবেষণাধর্মী কাজকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে পারবেন বলে ধারণা রয়েছে শিক্ষা মহলে।
কিন্তু এনসিইআরটির প্রাক্তন অধিকর্তা জে এস রাজপুত বলেন, গোটা দেশ নরেন্দ্র মোদির উপর আস্থা রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই ভাবনাচিন্তা করে মন্ত্রিসভা গড়েছেন। স্মৃতি ইরানির স্বচ্ছ চিন্তাভাবনা রয়েছে বলেই মনে করি। বয়সও কম। যুব সমাজের প্রতিনিধি তিনি। ফলে তাঁর উচ্চতর ডিগ্রি থাকাটা বড় ব্যাপার বলে আমি মনে করি না।’
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, ‘তথাকথিত ডিগ্রির উপরে শিক্ষা নির্ভর করে না। কারো ডিগ্রি থাকলেই তিনি শিক্ষিত, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু এক জন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ব্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত বিষয়গুলি স্মৃতিকে দ্রুত বুঝে নিতে হবে। সেটা তার পক্ষে অসম্ভব পরিশ্রমের হবে।’ পবিত্রবাবু বলেন, সময়ের চাহিদা মেনে কিভাবে নতুন নতুন বিষয় শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব, তা-ও মাথায় রাখতে হবে স্মৃতিকে। বিদেশের শিক্ষাব্যবস্থা যেভাবে এগিয়ে গিয়েছে, তা নিয়েও একজন শিক্ষামন্ত্রীর ধারণা থাকা প্রয়োজন।
প্রকাশ্যে না বললেও ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপির নেতারা অবশ্য অনেকেই মনে করছেন মানব-সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়কে স্মৃতিকে বাছা ঠিক হয়নি। এই মন্ত্রণালয়ের নাম বদলে মোদি একটি সামগ্রিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় গড়বেন বলে প্রত্যাশা ছিল। তা তো হয়ইনি, উপরন্তু যাকে মন্ত্রী করলেন তার যোগ্যতা কি, সেটাও বিবেচনা করে দেখা উচিত ছিল। স্মৃতি বলিয়ে-কইয়ে। তাকে তথ্য-সম্প্রচারের মতো মন্ত্রণালয় দিলে অসুবিধা হতো না।
বিজেপির মধ্যেই এই উষ্মা আরো খুঁচিয়ে দিতে কংগ্রেস নেতা দিগি¦জয় সিংহ গতকাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বা কোনো মন্ত্রীর ডিগ্রিটা বিতর্কের বিষয় নয়। কিন্তু মুরলিমনোহর জোশিকে ছেড়ে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মোদি কেন স্মৃতিকে বাছলেন, সেটা অবশ্যই বিস্ময়ের!’
মজার বিষয় হলো, এ ব্যাপারে কংগ্রেসের মধ্যে যে মতান্তর নেই তা নয়। কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘এ ধরনের পারিপার্শ্বিক ব্যাপার নিয়ে সমালোচনা না করে, নীতিগত বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করা উচিত।’ একই মত কংগ্রেস নেতা মাখনলাল ফোতেদারেরও। তা ছাড়া দলের একাংশ নেতার মতে, ভোটে গো-হারান হারার পর এখন ক’দিন চুপচাপ থাকা উচিত কংগ্রেসের। স্মৃতি মন্ত্রী হয়ে মুরলিমনোহর জোশির মতো শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণটুকু অন্তত করবেন না বলেই তাদের আশা। বরং তাদের মতে, খামোখা বিষয়টি খোঁচানোর কারণেই আজ সনিয়া গান্ধীকে নিশানা করার সুযোগ পেয়ে গেল বিজেপি।
পারস্পরিক এই চাপানউতোরের পর কিন্তু একটা প্রশ্ন রয়েই গেল। মানব-সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে স্মৃতির ভবিষ্যত কি? গভীর রাতে সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেই অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন স্মৃতি।
সূত্র : আনন্দবাজার দেশ।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।