সিলেট: আব্দুস সালাম। সিলেট নগরীর শিবগঞ্জের বাসিন্দা। তিনি শেয়ার ব্যবসা করেই পরিবারের যাবতীয় খরচ বহন করেন। কিন্তু অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সিলেট মেট্রোসিটি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়। এতে বিপাকে পড়েছেন তিনি। শুধু আব্দুস সালামই নয়, তার মতো প্রায় ১২ হাজার বিনিয়োগকারী এখন অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত ও লেনদেন চালুর দাবিতে গত মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইব্রাহিম আলীকে ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে লিখিত আশ্বাসের মাধ্যমে মুক্তি পান দু’জন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটের মেট্রোসিটি সিকিউরিটিজ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর অডিটে দুর্নীতি ধরা পড়ায় সিএসই কর্তৃপক্ষ মেট্রোসিটি সিকিউরিটিজের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ফলে গত ৩ এপ্রিল থেকে গ্রাহকরা শেয়ার বেচাকেনা করতে পারছেন না। এরপর থেকে মেট্রোসিটি সিকিউরিটিজের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়সহ ৭টি শাখা বন্ধ করে আত্মগোপন করেন। এতে দুই মাস ধরে লেনদেন করতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন গ্রাহকরা।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, শেয়ার লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকা লোপাট করে নেয়। ২০১৩ সালের ২ জুন থেকে ২০১৪ সালের ২০ মার্চ সময়কালে গ্রাহকদের এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এ নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি মামলাও করেছেন।
লোপাটকারীদের তালিকায় আছেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও সাবেক এমডি ইব্রাহীম আলী, তার স্ত্রী নাজমা বেগম, ছেলে রাফি ইব্রাহীম, তার স্ত্রী ফারজানা মালেক জয়া, শ্বশুর আব্দুল মালেক ও পরিচালক খালেদ আহমদসহ ৬ কর্মকর্তার নাম।
মেট্রোসিটির বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম থানায় দাখিল করা এজাহারে এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।
তার দাখিল করা বিবরণীতে কোম্পানি সাবেক এমডি ইব্রাহীম আলী ৩০ লাখ ৪৯ হাজার ১০৪ টাকা, তার স্ত্রী নাজমা বেগম ৭৮ লাখ ৫ হাজার ২৬৩ টাকা, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আরাফাত আহমেদ ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার ৪৪৩ টাকা, মালেকা পারভীন এক কোটি ২১ লাখ ৯৪ হাজার ৬২০ টাকা, ইব্রাহিমের ছেলে রাফি ইব্রাহীম ৬৪ লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৮ টাকাসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের তথ্য রয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে মেট্রোসিটি সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ও সাবেক এমডি ইব্রাহিম আলী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে আসার খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা সেখানে জড়ো হন। এক পর্যায়ে তারা কার্যালয় গেইটে অবস্থান নিয়ে দু’জনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। দীর্ঘ আলোচনার পর আগামী শনিবার গ্রাহকদের নিয়ে বৈঠক করে সমস্যা সমাধান করার লিখিত আশ্বাস দিলে বিকাল ৪টায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী গ্রাহক তানভির আহমদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘মেট্রোসিটি সিকিউরিটিজ আমাদের পথে বসিয়েছে। তাদের ওপর নির্ভর করে আমরা শেষ সম্বলটুকু বিনিয়োগ করেছি। এখন আমরা নিঃস্ব। পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছি। তাদের কাছে বার বার ধরনা দিয়েও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।’
অপর এক গ্রাহক বলেন, ‘মেট্রোসিটি সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান ও এমডির কাছে আমরা কোনো লাভ চাই না। শুধু আমাদের আসল টাকা ফেরত চাই।’
মেট্রোসিটি বিনিয়োগকারী স্বার্থ রক্ষা কমিটির সভাপতি শফিকুর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘ব্রোকার হাউসটির পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তারা গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। গ্রাহকরা তাদের শেয়ার বিক্রি করতে এলে নানা অজুহাত দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন।’
বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘দায়িত্ব পাওয়ার পর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও সাবেক এমডি ইব্রাহীম আলী এবং তার ছেলে রাফি ইব্রাহিমকে আসামি করে চলতি বছরের মার্চে কোম্পানির পক্ষে মামলা করি।’
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বাংলামেইলকে, ‘অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোসিটি সিকিউরিটিজের লেনদেন স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছি।’
বিষয়টি সমাধানে সিলেটের নেতৃস্থানীয়দের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রাহকরা তাদের অর্থ ফেরত পেলেই কেবল ওই প্রতিষ্ঠানকে লেনদেন শুরুর সুযোগ দেওয়া হবে।’