গ্রীষ্মের এ সময়ে আরামদায়ক পোশাক হিসেবে ফতুয়া সবারই পছন্দের। আর এ পছন্দের তালিকায় তরুণরা যেমন আছেন, তেমনি আছেন বড়রাও। অবশ্য এক সময় শুধু বড়দেরই ফতুয়া পরতে বেশি দেখা যেত। কিংবা ফতুয়া এক সময় অনেকটা ঘরোয়া পোশাক হিসেবেই বেশি পরতেন বড়রা। অন্যদিকে আগে ফতুয়া ছিল কেবল পুরুষদের পরার পোশাক। কিন্তু এখন এর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া এক সময় ফতুয়ার রঙের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যেত সাদা জাতীয় হালকা রঙ এবং নকশায়ও তেমন বৈচিত্র্য ছিল না। অবশ্য সেই আগের দিন এখন আর নেই। এখন ফতুয়ার রঙে যেমন এসেছে বৈচিত্র্য, তেমনি নকশায়ও আনা হয়েছে পরিবর্তন। আর সেজন্য এখন ফতুয়া পরছেন বড়দের পাশাপাশি তরুণ-তরুণীরা, বিশেষ করে ফ্যাশন সচেতন ও আরামপ্রিয় মানুষ গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ থেকে নিজেকে বাঁচাতে ফতুয়াকেই বেছে নিচ্ছেন। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের একটি ফ্যাশন হাউসে ফতুয়া কিনতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া নোমান তালুকদার। তিনি বলেন, গরমে আরামের কথা ভেবেই ফতুয়া কিনতে এসেছি। কারণ হালকা-পাতলা পোশাক হিসেবে ফতুয়া বেশ উপযোগী এ গরমে। এছাড়া ফতুয়া পরে এখন ক্যাম্পাস, বেড়ানো বা যে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া যায়। জিন্স বা গ্যাবাডিন প্যান্টের সঙ্গে কিংবা সস্নিপারসহ যে কোনো জুতার সঙ্গেও ফতুয়া মানিয়ে পরা যায় অনায়াসে।
ফ্যাশন ডিজাইনার আকাশ বলেন, ফতুয়া একটি ক্যাজুয়াল পোশাক হলেও এর ব্যবহারিক সুবিধা অনেক। এটি পরার নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নেই। তাই শিশু থেকে বড় সবাই পরতে পারেন। আবার রঙ ও নকশার দিকে খেয়াল রেখে ক্যাজুয়াল ফতুয়া পরে অফিস যেমন করা যাবে, তেমনি চাইলে একটু জমকালো ফতুয়া পরে যাওয়া যাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও। আর আরামের কথা ভাবলে ফতুয়ার চেয়ে ভালো পোশাক অন্যটি নেই। তবে সব রঙ ও নকশার ফতুয়া পরে সব অনুষ্ঠানে না যাওয়া ভালো। সেজন্য স্থান ও উপলক্ষ মেনেই ফতুয়া পরা ভালো। যেমন ক্যাম্পাসের জন্য একটু বস্নক, বাটিক কিংবা স্ক্রিন প্রিন্টের অথবা একরঙা কাপড়ে হালকা এমব্রয়ডারি বা হালকা সুই-সুতার কাজের নকশা করা ফতুয়া পরা যেতে পারে। আর অফিসের বেলায় একরঙা কাপড়ে হালকা এমব্রয়ডারি বা হালকা সুই-সুতার কাজের নকশা করা ফতুয়া পরাটাই উত্তম হবে। তবে কোনো অনুষ্ঠানে যদি ফতুয়া পরে যেতে চান, তাহলে একটু ভারি নকশার ফতুয়া পরাই ভালো।
এছাড়া ক্যাম্পাসে, ঘরোয়া পরিবেশে সুতি অথবা পাতলা কাপড়ের ফতুয়াই বেশি চলনসই। কিন্তু অফিস বা কোনো অনুষ্ঠানে গেলে সুতির পাশাপাশি যদি সিল্ক, জামদানি, এন্ডি কিংবা অন্য কাপড়ের ফতুয়া পরা গেলে ভালো মানাবে।
গরমে আরামের কথা ভেবে এরই মধ্যে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো তাদের বিক্রয় কেন্দ্রে হাজির করেছে নানা রঙ ও নকশার ফতুয়া। এসব ফতুয়া কোনোটা সুতি কাপড়ে, কোনোটা পাতলা খাদি কাপড়ে, আবার কোনোটা তৈরি সিল্ক, জামদানি বা এন্ডি কাপড়ে। এসব ফতুয়া কোনোটা বস্নক, বাটিক বা স্ক্রিন প্রিন্টের নকশা করা; আবার কোনোটায় রয়েছে এমব্রয়ডারি, সুই-সুতার সেলাই বা অ্যাপ্লিকের কাজ। তবে সব ফতুয়ার নকশা এক নয়। কিছু ফতুয়ায় দেখা যাবে কেবল বুকের কাছেই নকশা করা, আবার কিছু ফতুয়ায় হাতের কাছেই নকশা করা। অবশ্য কিছু ফতুয়ায় নকশা রয়েছে বুক, কলার ও হাতায়।
পুরুষদের জন্য সুতি কাপড়ে বস্নক, বাটিক বা স্ক্রিন প্রিন্টের ফতুয়া কেনা যাবে ৬৫০ থেকে ৯৫০ টাকায়। পাতলা খাদি কাপড়েও বস্নক, বাটিক বা স্ক্রিন প্রিন্টের ফতুয়া পাওয়া যাবে। এগুলোর দামও ৬৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। সিল্ক কাপড়ের তৈরি ফতুয়া কেনা যাবে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। সিল্ক কাপড়ের তৈরি এবং বিভিন্ন মাধ্যমে নকশা করা ফতুয়া কেনা যাবে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। জামদানি কাপড়ের তৈরি খাদি পাওয়া যায় বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে। এগুলো কেনা যাবে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়।
চাইলে তৈরি ফতুয়া না কিনে কাপড় কিনে নিজের পছন্দের ফতুয়া তৈরি করিয়েও নিতে পারেন। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে সুতি, সিল্ক, খাদিসহ বিভিন্ন তাঁতের কাপড় পাওয়া যায়। সেখান থেকে কাপড় কিনেও বানাতে পারবেন। এতে খরচ কম হবে, আবার পছন্দের ফতুয়া পাওয়া যাবে। সুতি কাপড় প্রতি গজের দাম ৯০ থেকে ১৫০ টাকা, সিল্ক কাপড় প্রতি গজের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, এন্ডি কাপড় প্রতি গজ ৪৮০ থেকে ৫৮০ টাকা। জামদানি ফতুয়া পিস ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।
প্রবর্তনা ফ্যাশন হাউসে নানা ধরনের কাপড় পাওয়া যাবে। এছাড়া ঊষা সিল্ক, দোয়েল সিল্ক, সফুরা সিল্কে পাওয়া যাবে সিল্কের কাপড়। নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটেও পাওয়া যাবে ফতুয়ার কাপড়।
আড়ং নানা কাপড়ের নানা নকশার ফতুয়া এনেছে এ গ্রীষ্মের জন্য। তাদের এখানে সব বয়সীর ফতুয়া রয়েছে। কে ক্র্যাফট, প্রবর্তনা, নিপুণ, দেশাল, রঙ, অঞ্জনস, বিবিয়ানা, নগরদোলা, সাদাকালো, বাংলার মেলা, নিত্যউপহার, মেঘ, নিখুঁত বাংলাদেশ, কারুপল্লী, রাংতাসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে এ সময় নানা রঙ ও নকশার ফতুয়া পাওয়া যাবে। এছাড়া শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউসগুলোতে বৈচিত্র্যময় ফতুয়ার সংগ্রহ রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মার্কেটের ফ্যাশন হাউসগুলোতেও কেনা যাবে পছন্দের ফতুয়া।