নিজস্ব প্রতিবেদক- ১৯৯০ সালের কথা। অনেকটা শূন্য হাতে তিনি শুরু করেছিলেন কম্পিউটারের যন্ত্রপাতির ব্যবসা। সফল হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। মাত্র ২৪ বছরের মধ্যে মেধা আর কঠোর পরিশ্রমে তিনি এখন সফল ব্যবসায়ী। কাজ করছেন শিক্ষা ও প্রযুক্তি উন্নয়নেও। তিনি স্বপ্নচারী। স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে ভালোবাসেন। তরুণ প্রজন্ম নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা। দেশের শিক্ষা, প্রযুক্তি ও ব্যবসার গতি-প্রকৃতি নিয়ে তিনি খোলামেলাভাবে কথা বলেছেন । তার সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন হারুন-অর-রশিদ জন্ম ও শিক্ষাজীবন ১৯৬৫ সালের ২৩ জানুয়ারি চাঁদপুর শহরে জন্ম গ্রহণ করি। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৭৬ সালে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এসএসসি পাস করি ১৯৮১। এরপর ১৯৮৩ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে ভর্তি হই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৮৭ সালে পরিসংখ্যানে বিএসসি (অনার্স) এবং ১৯৮৮ সালে এমএসসি পাস করি। ব্যবসায় হাতেখড়ি ও নিজের প্রতিষ্ঠান বাবা ইউনুছ খান চাকরি করতেন বিএডিসিতে। অবসরের পর তিনি ব্যবসায় নামেন। ছোটখাটো ব্যবসা। ছিলেন হোলসেলার। বাবা চাইতেন সরকারি চাকরিজীবী হই। কিন্তু ১৯৯০ সালে মাত্র দুটি ৮০৮৮ এক্সটি পিসি দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। প্রতিষ্ঠা করি ড্যাফোডিল গ্রুপ। বর্তমানে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ড্যাফোডিল কম্পিউটারস, ড্যাফোডিল পিসি, ড্যাফোডিল অনলাইন, ড্যাফোডিল মাল্টিমিডিয়া, ড্যাফোডিল সফটওয়্যার, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, মাই কিডস, জবসবিডি ডটকম, কম্পিউটার ক্লিনিক, ডলফিন কম্পিউটার্স লিমিটেড, ড্যাফোডিল ওয়েব অ্যান্ড ই-কমার্স প্রভৃতি। ব্যবসা ক্ষেত্রে যত সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা তো রয়েছেই। এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, বন্দরসহ অনেক অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। কিছুটা সমাধানের চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলা একটি সমস্যা। নিয়মমাফিকভাবে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা সম্ভব হয় না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঠিক তদারকির অভাবে। এছাড়া কেউ ভালো করলে সহায়তা না করে প্রতিযোগীরা নানাভাবে দমানোর চেষ্টা করেন। এটি করতে গিয়ে অনেকেই অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত করেন। ব্যবসা পরিস্থিতি নিয়ে মূল্যায়ন দেশের ব্যবসায়ীরা অনেক পরিশ্রমী। উন্নত দেশে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হওয়ার পর ব্যবসায়ীরা কাজ শুরু করেন। সরকার ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু আমাদের দেশে তার উল্টো। অনেক সমস্যার মধ্যে ব্যবসায়ীরা কাজ করেন। পরে সরকারের কাছে সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানান। কিছু সমস্যার সমাধান হয়। কিছু থেকেই যায়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা থমকে দাঁড়ান না। ফলে নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দেশের বাণিজ্যিক অবস্থা বেশ ভালো। সুদ হার ব্যবসার জন্য যতটুকু বাধা আমাদের দেশে উচ্চ সুদ রয়েছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এটি বিদ্যমান রয়েছে সিস্টেমের অভাবে। প্রতিযোগিতা না থাকায় ব্যবসায়ীরা অনেক মুনাফা করছেন। যার ফলে তারা অতিরিক্ত সুদও পরিশোধ করতে পারছেন। সমন্বিত কৌশল প্রণয়ন করলে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বাড়বে। ব্যবসার পরিবেশ ও গ্রাহকের সেবার মান অনেক বাড়বে। এতে প্রকৃত মুনাফা অনেক কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সুদ হার কমে যাবে। যে কারণে ব্যবসার প্রতি অনেকের অনাগ্রহ ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থাই এর মূল কারণ। সবাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা চাকরিজীবী হতে চান। মা-বাবাও সন্তানদের ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখান না। তবে বর্তমানে এর উন্নতি হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে কাজ করছে। এর মধ্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ২ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছে। এখন অনেকেই বুঝে গেছেন স্বাবলম্বী হওয়ার ভালো উপায় হচ্ছে ব্যবসা। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসা বিভিন্ন সমস্যার কারণে প্রযুক্তি ব্যবসা বিকশিত হয়নি। বর্তমানে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গেটওয়ের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। তাদের মতো ই-কমার্স জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আস্তে আস্তে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হচ্ছে। এ ব্যবসার আগে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। বর্তমানে ভারত আইটির ক্ষেত্রে যে অবস্থানে আছে, বাংলাদেশকে সেই অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় বাংলাদেশে এগিয়ে যাবে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি পরামর্শ তরুণ প্রজন্মের প্রতি প্রথম পরামর্শ হলো কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। কোনো কিছু পাওয়ার আগে কষ্ট করার মানসিকতা অবশ্যই থাকতে হবে। অনেকে আছে বড় হতে চায়, কিন্তু তার জন্য সামান্য কষ্ট করতে রাজি নয়। একটি গোলাপ ফুল হাতে পেতে হলে কাঁটার ঘা খেয়ে পেতে হয়। তাই জীবনে বড় হতে হলে প্রথমে অবশ্যই কষ্ট স্বীকার করতে হবে। ধৈর্য, সততা, যোগ্যতা ও একনিষ্ঠতার সঙ্গে কাজ করে গেলে সব তরুণই সফল নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বলে মনে করি। বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে সবুর খান সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলোর জোট ওয়ার্ল্ড ইনফেরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের (উইটসার) পরিচালক এবং গ্লোবাল ট্রেড কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৩ সালে তিনি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ২০০২-২০০৩ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২-২০০৩ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে ইসলামিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস ফোরামসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। পুরস্কার ও সম্মাননা মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সবুর খান পেয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা। তিনি যেসব পুরস্কার পেয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ ওয়ার্ল্ড কোয়ালিটি কংগ্রেস অ্যাওয়ার্ড-(২০১৩), নেশন বিল্ডার অ্যাওয়ার্ড (২০১৩), দ্য মিশন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট সম্মাননা (২০১২), ওয়ার্ল্ড কোয়ালিটি কমিটমেন্ট স্বর্ণপদক (২০১০), অমর একুশে স্বর্ণপদক (২০০০), ফাইন্যান্সিয়াল মিরর বিজনেস পুরস্কার (২০০২), সাউথইস্ট ব্যাংক-দ্য ইন্ডাস্ট্রি পুরস্কার (২০০১), ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস পদক (২০০৫), ভাষা শহীদ স্মৃতি পদক (২০০৫), মওলানা ভাসানী স্মৃতি পদক (২০০২), স্বাধীনতা ফোরাম পুরস্কার (২০০২)। এছাড়া ২০১৩ সালে তিনি ব্যবসায়ীদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘সিআইপি’ মর্যাদা ম্মাননা।