একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করছে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা হচ্ছেন চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের আগের দুই সরকারের মন্ত্রিসভায় শরিক দলের একাধিক সদস্য ছিলেন। যে কারণে ধরে নেওয়া হয়েছিল এবারও থাকবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ঘোষিত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী তালিকায় শরিক দলের কোনো নেতার নাম নেই।
রোববার বিকাল ৪ টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সরকারের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। ৪৭ সদস্যের এ মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ২৫ মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী রয়েছেন। ঘোষণা দেওয়া ৪৭ জনের সবাই আওয়ামী লীগের।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সে সময় জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও জাসদের আ স ম আব্দুর রবকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে সরকার গঠন করে তাকে ‘জাতীয় ঐক্যমত্যের’ সরকার বলেন শেখ হাসিনা।
এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে এই পর্বে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের মন্ত্রিসভায়ও জিএম কাদেরসহ জাতীয় পার্টির নেতাদের পাশাপাশি সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রী করা হয়েছিল।
ওই সরকারের শেষ দিকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার টানা দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারে ইনুর সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়েছিল, পাশাপাশি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নেতারাও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
এদিকে সদ্য ঘোষিত নতুন মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বা ১৪ দলীয় জোটের কোনো শরিক দলের কাউকে স্থান দেওয়া হয়নি। এমনকি সরকারি দলের প্রবীণ নেতারা এই তালিকায় নেই। রেববার যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, এদের বেশির ভাগই নতুন মুখ। যদিও দু-একজন ছাড়া বাকিরা সাংসদ হিসেবে সংসদে একাধিকবার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
সচিব শফিউল আলম জানিয়েছেন, সোমবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ হবে।
এদিকে সরকারের ২৫ মন্ত্রণালয়ের ১৮টিতেই পরিবর্তন এসেছে। তাতে দেখা গেছে, বিদায়ী সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রী জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন।
বিদায়ী সরকারে জাতীয় পার্টি থেকেও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্থানীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও বাদ পড়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের পরদিনই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছিলেন, তাদের দলের কোনো সদস্য এবার আর মন্ত্রিসভায় থাকছেন না। সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবে জাতীয় পার্টি।
সে কারণে নতুন মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির নেতাদের বাদ পড়াটা অনেকটা অনুমিতই ছিল। তবে ইনু, মেনন ও মঞ্জুর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়াটা চমক হিসেবেই এসেছে, যেমনটি ঘটেছে মন্ত্রিসভায় পুরনোদের অধিকাংশের বদলে নতুন মুখ আসায়।
নতুন সরকারে তথ্যমন্ত্রী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ। চট্টগ্রামের এই সাংসদ বিগত মন্ত্রিসভায় না থাকলেও ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় ছিলেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবে।
আর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান আহমেদ, যিনি ২০১৬ সাল থেকে এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
লালমনিরহাট-২ আসনের এই সাংসদ ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে পরের বছর খাদ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় এসেছিলেন। এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে ময়মনসিংহ-২ এর শরীফ আহমেদকে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন শাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজারের এই আওয়ামী লীগ নেতা এবারই প্রথম মন্ত্রিসভায় এলেন। এখানে উপমন্ত্রী করা হয়েছে খুলনার মেয়র তালুকদার খালেকের স্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারকে।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী হিসেবে কারও নাম আসেনি। তবে এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বরিশালের জাহিদ ফারুক এবং উপমন্ত্রী করা হয়েছে শরীয়তপুরের সাংসদ এনামুল হক শামীমকে।