জিয়াউর রহমান বেলাল ॥
সরকারের প্রশাসনে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চাঁদপুরের কৃতি সন্তান মো: মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী। যিঁনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদ মর্যাদা লাভ করেছেন। গত সোমবার ৬ এপ্রিল, ২০১৫ খ্রি: তারিখে সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। শুধু তা-ই নয়, জনাব মাকছুদ পাটওয়ারী তাঁর একনিষ্ঠ কর্মদক্ষতায় ইতিপূর্বে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব হয়েছিলেন। যুগ্ম-সচিব থাকাকালে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাননীয় সচিব মো: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে আন্তরিকভাবে সহায়তা করার জন্য দেশের সকল উপজেলা ও জেলা প্রশাসন এবং বিভাগীয় কমিশনার অফিসের কার্যক্রম মনিটরের পাশাপাশি বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনকে ব্যাপক শক্তিশালীকরণে সুনিপুণভাবে কাজ করেছেন। সরকারের একজন উচ্চ পদস্থ সুদক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সারা বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। সরকারের এই অতিরিক্ত সচিব মহোদয় মানুষের জন্য আরও বেশি বেশি কাজ করায় বিশ্বাসী। তিঁনি আমৃত্যু নি:স্বার্থভাবে দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মঙ্গল এবং কল্যাণে কাজ করে যেতে চান এবং তাদের পক্ষে আরও বেশি বেশি কাজ করার জন্য গভীর মনোনিবেশ করায় দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। কেননা তাঁর মতে, ‘দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ বাঁচলে-দেশ বাঁচবে, দেশ বাঁচলে-রাষ্ট্র বা সরকার বাঁচবে। তাই আমাদের সকলকে মানুষের জন্য আরও বেশি বেশি কাজ করতে হবে’।
তিঁনি গতকাল শনিবার বিকেলে এ প্রতিবেদকের সাথে মুঠোফোনের একান্ত আলাপচারিতায় এ কথা বলেন। টাঙ্গাইলে চাকুরীজীবনের প্রসঙ্গ উন্থাপন করতেই তিনি অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে শুধু জানান, ‘জীবনে কোনোদিন কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি; ইনশাআল্লাহ্ বাকী জীবনেও কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না। সরকারের নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা করাই আমাদের বড় কাজ। এর কোনো বিকল্প নেই কিংবা এর বাইরে আমরা আর কোনো কিছু ভাবতে পারি না’। সেই সাথে তিঁনি চাকুরী জীবনের পাশাপাশি তাঁর বৃদ্ধ মাতা, শ্বাশুড়ি, পরিবার-পরিজন, দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য যাতে আরও বেশি বেশি করে কাজ করতে পারেন; সেজন্য সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দোয়াপ্রার্থী। এখানে বিশেষভাবে স্মরণ করা যেতে পারে, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে স্থানীয় প্রভাবশালী বা ক্ষমতাশালী কারো কাছে মাথা নত করেননি। সেসময় তিঁনি টাঙ্গাইলের তৎকালীন এমপি কাদের সিদ্দিকী ও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং ক্ষমতাধর রানা-বাপ্পীর কোনো প্রকার অন্যায়-আব্দার এতটুকু রবদাশ্ত করেননি। একজন ন্যায়পরায়ণ সরকারি কর্তা ব্যক্তি হিসেবে তিনি টাঙ্গাইলে সরকারি ভূমি রক্ষায় আজও সেখানে ইতিহাস হয়ে আছেন।
সরকারের নিবেদিতপ্রাণ এই উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার স্থায়ী নিবাস চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন সকদীরামপুর গ্রামের বড় পাটওয়ারী বাড়ি। তাঁর পিতার নাম মরহুম মো: বদিউজ্জামান পাটওয়ারী। তিঁনি ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তাঁর জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ। তিঁনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে স্থানীয় চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে প্রথম বিভাগে মানবিক বিভাগ থেকে এস.এস.সি এবং চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে প্রথম বিভাগে মানবিক বিভাগ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। একজন নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে বি.এ(অনার্স) এম.এপাস করেন। তিনি বি.সি.এস (প্রশাসন) ক্যাডার, ১৯৮৫ ব্যাচের প্রথম দিকের একজন কর্মকর্তা এবং ১৫ ফ্রেব্র“য়ারি ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে চাকুরীতে যোগদান করেন। নারায়ণগঞ্জের সহকারি কমিশনার হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর চাকুরী জীবন শুরু। তারপর মুন্সিগঞ্জের বারহাট্টা, নেত্রকোণা, গজারিয়া ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট; মুন্সিগঞ্জ ও শরিয়তপুরের সিনিয়র সহকারি কমিশনার; ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট; বাজিতপুর ও কিশোরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার ; রাজবাড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ; সাবেক সংস্থাপন বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব; টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক; মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব এবং যুগ্ম-সচিব হিসেবে অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে তিঁনি টাঙ্গাইলে জেলা প্রশাসক থাকাকালে তাঁর সততা ও একনিষ্ঠতা দিয়ে সরকারের স্বার্থ রক্ষায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। -যা সরকারের মাঠ প্রশাসনের ইতিহাসে চিরদিন মাইলফলক হয়ে থাকবে।
জনাব মাকছুদ পাটওয়ারী চাকুরী জীবনে দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, হংকং, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও অষ্ট্রেলিয়ায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ব্যক্তি জীবনে তিঁনি চাঁদপুর পুরাণবাজারের দানশীল এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম হাজী তাজুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ কণ্যা রাজিয়া সুলতানা মনি’র পতি এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরীর নাতিন জামাই। তাঁর শ্যালক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম কিশোর ও ব্যারিষ্ট্রার জহির উদ্দিন বাবর। তিঁনি ২ পুত্র ও ১ কণ্যা সন্তানের জনক। জ্যেষ্ঠ পুত্র আকিব মাকছুদ ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.বি.এ ডিগ্রীধারী, কণ্যা তানজিলা মাকছুদ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আই.বি.এ সম্পন্নকারী এবং কণিষ্ঠ পুত্র আফিক মাকছুদ তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষানুরাগী হিসেবে এলাকায় তাঁর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তিনি তাঁর উপজেলা ফরিদগঞ্জের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান উন্নয়ণের বিষয়ে ঢাকা থেকে নিয়মিত খোঁজখবর নিয়ে থাকেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতাও করেন। এছাড়া তিনি চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও পড়ালেখার মান উন্নয়ন এবং ফলাফলের বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে আরও ভালো এবং সন্তোষজনক ফলাফল হয়; সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কঠোর তাগিদ প্রদান করেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সরকারের এই কর্তা ব্যক্তির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার মান উন্নয়ন ও সন্তোষজনক ফলাফল অর্জনে প্রচন্ড আগ্রহী। শিক্ষার প্রতি রয়েছে তাঁর ব্যাপক অনুরাগ। প্রশাসনিক কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশের যেসব স্থানে চাকুরী করেছেন সেসব স্থানে সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার মান উন্নয়ন ও সন্তোষজনক ফলাফল করার জন্য নানাভাবে উৎসাহ-অনুপ্রেরণা যোগাতেন। -যা সেসব স্থানে আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। অতি সাধারণ মানের জীবনযাপনে বিশ্বাসী, নির্লোভী ও নিরহংকারী জনাব পাটওয়ারী কঠোর পরিশ্রম করতে ভালোবাসেন। অত্যন্ত স্পষ্টবাদী হিসেবে সর্বত্র তাঁর যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে।
বস্তুত: তিঁনি তাঁর কর্মে অনবদ্য সততার স্বীয় স্বকীয়তায় সমুজ্জ্বল এবং সারাদেশের মাঠ প্রশাসনের জন্য সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অবসর বলতে তাঁর জীবনে কোনো কিছুই নেই। সারাদিনই দাপ্তরিক কাজ নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকেন। সময় পেলে গবেষণাধর্মী বই পাঠ করেন এবং অবসরে যাওয়ার পর বই লেখা ও প্রকাশের আশা রয়েছে তাঁর। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া একই প্রজ্ঞাপনে চাঁদপুরের সাবেক গণপরিষদ সদস্য চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব মরহুম আব্দুল করিম পাটোয়ারীর ৪র্থ পুত্র চাঁদপুরের অপর কৃতি সন্তান মো: মাসুম পাটোয়ারী সিনিয়র সহকারি সচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে উপ-সচিব হয়েছেন। তিনি খুব সহসাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগদান করবেন। উল্লেখ্য, উপ-সচিব মো: মাসুম পাটোয়ারী চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলালের কণিষ্ঠ ভ্রাতা।