মোটর সাইকেলের চালক হানিফ ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ডে
জিয়াউর রহমান বেলাল মতলব উত্তর খাগুরিয়া থেকে ফিরে ॥
দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনের জন্য যাতায়াতে ব্যবহৃত ভাড়ায় খাটা মোটর সাইকেল চালক আবু হানিফের অভিনব চাতুরিপনা বিশ্বাস ঘাতকতায় মাত্র তের বছর বয়সী সম্ভাবনাময় এক কিশোরী নৃত্যশিল্পী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার লোমহর্ষক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
গত ১৬ ফেব্র“য়ারি রাতে ঘনিয়ারপাড় মতলব উত্তর উপজেলা কমপ্লেক্সের অদূরে মিঠুরকান্দি নামক এলাকার নির্জনস্থানে এ পৈশাচিক ঘটনা ঘটে। চালকসহ পাঁচ পান্ডব সূচি আক্তার নামের ওই নৃত্যশিল্পীকে অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক উপর্যুপরি গণধর্ষণ করে বলে মামলার অভিযোগ সূত্রে প্রকাশ। পরে রাত ২টায় ওই পান্ডব চালকই গুরুতর আহত অবস্থায় কিশোরীকে বাড়ি পৌঁছে দেয় এবং পরদিন সে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করে। অসহায় সূচি তার পিতা কাবিল মেম্বারের মৃত্যুর পর একই উপজেলার ২নং বাগানবাড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খাগুরিয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে তার সৎ পিতা নজরুল ইসলাম ও মাতা নাসরিন আক্তার রুবির সাথে বসবাস করে আসছিলো। এ ব্যাপারে মতলব উত্তর থানায় ৫জনকে আসামী করে মামলা (নং-৯,তারিখঃ ১৭/২/২০১৫ খ্রিঃ) হলে পুলিশ মোটর সাইকেল চালক আবু হানিফকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী হানিফকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ড চাওয়া হলে বিজ্ঞ আদালত ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করে। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় ভিকটিম সূচির জবানবন্দি বিজ্ঞ আদালতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। মামলার অপরাপর আসামীরা হচ্ছেঃ নাছির, আরিফ,সজিব ও শিপু। এদের প্রত্যেকের বয়স ১৭ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। এরা সবাই সমাজ বিরোধী বিখাউজ বলে এলাকাবাসী জানায়। নজরুলের মোটর সাইকেল চুরি হওয়ার পর থেকে সুপ্তি (১৮) ও সূচি (১৩) দু’বোনের নৃত্য পরিবেশনের আয় দিয়েই মূলতঃ তাদের সংসার চলতো। এদিকে গণধর্ষণকারী আসামীদের রক্ষায় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির অব্যাহত চাপে ক্ষতিগ্রস্থ ও অসহায় পরিবারটিতে বর্তমানে ব্যাপক আতংকভাব বিরাজ করছে।
জানা যায়, ওইদিন রাতে একই উপজেলার লালপুর গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানশেষে ষাটনল থেকে হানিফের মোটর সাইকেলযোগে খাগুরিয়া বাড়ি যাওয়ার পথে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামীরা পরস্পর গোপন যোগসাজশে রাস্তায় চলন্ত মোটর সাইকেল থামিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কিশোরীকে মিঠুরকান্দির নির্জনস্থানে নিয়ে জোরপূর্বক উপর্যুপরি পাশবিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনশেষে পান্ডবরা কাউকে কোনোকিছু জানালে অসহায় মেয়েটিকে জানে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। পরে তাকে হানিফের মোটর সাইকেলে উঠিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরদিন প্রয়োজনীয় চিকিৎসাশেষে থানায় মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ তাৎক্ষণিক একজনকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে পাঠায়। বাকী আসামীরা এলাকা থেকে গা ঢাকা দেয়ায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আসামীদেরকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ এবং চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তবে তিনি আসামীদের রক্ষায় প্রভাবশালীদের তদবির বা চাপের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। পরদিন ১৮ ফেব্র“য়ারি সকালে পাশবিক নির্যাতনের শিকার কিশোরীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতলে পাঠানো হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সূচি আক্তারের মেডিকেল পরীক্ষা করার জন্য মতলব উত্তর থানার কাগজ পেয়ে আমরা সাথে সাথে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। খুব সহসাই আমরা সেসব রিপোর্ট থানায় পাঠিয়ে দিব। এ ব্যাপারে গত ২২ ফেব্র“য়ারি দিনভর স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকের বেশক’জন সাংবাদিক সরেজমিনে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন।