১০ এপ্রিল ২০২১,
এদিকে সর্বশেষ শনিবার বিকালে করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা একদিনে সর্বোচ্চ। এই সময়ে করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৪৩ জন।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় এবং জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দিতে যাচ্ছে সরকার।
বর্তমানে সারা দেশে চলা ‘লকডাউন’-এর সময়সীমা শেষ হচ্ছে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ হতে যাচ্ছে। কিন্তু মাঝখানে দুইদিন অর্থাৎ ১২ ও ১৩ এপ্রিল ‘লকডাউন’ কিংবা কোনো বিধিনিষেধ থাকবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি সরকার থেকে।
এই দুইদিন কঠোর বিধিনিষেধ না থাকলে বড় ধরনের ঝুঁকির আশংকা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মানুষ এই দুই দিন সুযোগ পেয়ে গ্রামের বাড়িতে যেতে শুরু করবে। আবার লকডাউনের আতঙ্কে কেনাকাটা করতে বাজারে ভিড় করবেন। এটি হতে দেওয়া যাবে না। এই দুই দিন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে। যেটি হচ্ছে ‘কমপ্লিট’ লকডাউন। ১২ ও ১৩ এপ্রিল কী হবে- সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা সাপেক্ষে আগামীকালের (রোববার) মধ্যেই জানানো হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, তবে সংক্রমণ যাতে আর না বাড়ে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তাই যে অবস্থা এখন চলছে, এর চেয়ে বেশি খোলা সঙ্গত হবে না।
চলমান লকডাউনে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চালুসহ অনেক কিছু শিথিল করলেও কোনো গাড়ি এক শহর থেকে অন্য শহরে যেতে পারবে না। এ বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত দেওয়া রয়েছে।
পরামর্শক কমিটির সুপারিশ:
সারা দেশে উদ্বেগজনকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। এ অবস্থায় বুধবার রাতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩০তম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা সভাপতিত্ব করেন। সভায় বেশকিছু সুপারিশ গৃহীত হয়। সেখানে বলা হয়, সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ১৮টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও করোনা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। এগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না, সংক্রমণের হার বাড়ছে। বিধিনিষেধ আরও শক্তভাবে অনুসরণ করা দরকার।
অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন ছাড়া এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে সভায় মতামত ব্যক্ত করা হয়। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও মিউনিসিপ্যালিটি এলাকায় পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। শয্যাসংখ্যা, আইসিইউ সুবিধা, অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচেষ্ট।
ডিএনসিসি হাসপাতাল আগামী সপ্তাহের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সরকারি পর্যায়ের এই কার্যক্রমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির বাড়তি চাপ থাকায় অতি দ্রুত আরও সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।
সভায় আরও বলা হয়, সংক্রমণের হার বাড়ার কারণে করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোয় রোগীর ভিড় বাড়ছে, রিপোর্ট পেতেও সময় লাগছে। যারা পরীক্ষা করতে আসছেন তাদের একটা বড় অংশ বিদেশগামী যাত্রী।
বিদেশে অভিবাসী কর্মজীবী মানুষ ছাড়া অন্য যাত্রীদের বেসরকারি পরীক্ষাগারে পাঠাতে পারলে সরকারি ল্যাবরেটরিতে চাপ কিছুটা কমবে। বিদেশে অভিবাসী কর্মজীবী মানুষ ছাড়া অন্য যাত্রীদের পরীক্ষা বেসরকারি পরীক্ষাগারে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন।
এতে রোগীদের পরীক্ষা ও রিপোর্ট দ্রুত প্রদান করে আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাবে, যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, টিকা দেওয়ার কার্যক্রম যুক্তরাজ্যে ফলপ্রসূ হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও টিকা কর্মসূচি সফল করতে টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে বেসরকারিভাবে টিকা আমদানি করে টিকাদানের সুপারিশ পুনরায় করা হলো।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গত সোমবার থেকে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর কার্যকারিতা বোঝা যাবে আগামী দুই সপ্তাহ পর।
এ ছাড়া মৃত্যুর পরিস্থিতি বোঝা যাবে আগামী তিন সপ্তাহ পর। তবে এ সময়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমাতে সরকার নতুন করে যে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে, পরিস্থিতি উত্তরণে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে প্রান্তিক মানুষের জীবন ধারণের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। একই মাসের ১৮ তারিখে দেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
অর্থাৎ, ২৬ মার্চের ছুটি থেকে শুরু হয়ে সাপ্তাহিক নিয়মিত ও সাধারণ ছুটি মিলিয়ে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস, যানচলাচল বন্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরবর্তীকালে এই ছুটি ৩১ মে পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হয়। সেই সময়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও হাসপাতালসহ জরুরি সেবা বিভাগগুলো এই ঘোষণার আওতামুক্ত রাখা হয়।