এহেন লোমহর্ষক ঘটনা ধামাচাপা দিতে মতলব উত্তর এলাকার শাসকদলের দুই দুর্ধর্ষ ক্যাডারকে বিভিন্নস্থানে দৌড়-ঝাঁপ দিতে দেখা যায়। শোনা যায়, তারা ধৃত আসামী আবু হানিফকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য এবং অন্যান্য আসামীদের রক্ষায় তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মোটা অংকের টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ব্যাপক দৌড়-ঝাঁপ দিতে থাকে। তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনদের এবং দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে জোর চেষ্টা-তদবিরের মাধ্যমে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। তারা আসামীদেরকে তাদের দলীয় লোক বলেও পরিচয় দেয় এবং মামলা এন্ট্রি না করতে ও ধৃত আসামীকে ছেড়ে দিতে থানা-পুলিশে ব্যাপক চাপাচাপি করতে থাকে। অবশেষে সুবিধা করতে না পেরে তারা সূচির মা ও অভিভাবকদের ৬/৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মামলা আপোষ করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু থানা পুলিশ অনঢ় থাকায় তাদের সে চেষ্টা নিস্ফল হয়। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এই দুই ক্যাডারকে প্রায়ই বিভিন্নস্থানে তদবির করতে দেখা যায়। তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপের ব্যাপারে ভয়ে লোকজন মুখ খুলতে সাহস পায় না। বহুল আলোচিত-সমালোচিত এই দুর্ধর্ষ ক্যাডারদ্বয় হচ্ছে যথাক্রমে মুছা ও বিরাজ।
এদিকে বহুল আলোচিত কিশোরী নৃত্যশিল্পী সূচি গণধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ সাংবাদিকদের আরো জানান, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত) ২০০৩এর ৯(১)/৩০ধারা মোতাবেক মামলাটি রুজু করা হয়েছে। বর্তমানে মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কার্যক্রম চলছে। মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়ার পরই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে’। অপরদিকে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ কেউই এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। তবে তাঁদের কথা; ‘যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে সেহেতু আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। আইনে আসামীদের অপরাধ প্রমাণিত হলে বিচারে শাস্তি হবে আর নির্দোষ প্রমাণিত হলে খালাস বা অব্যাহতি পাবে। আইনের বিষয়ে আমাদের আর কোনো কথা নেই’। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য ভিকটিম সূচিকে খাগুরিয়া চৌধুরী বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে একাধিকবার রিং করলেও সে ফোন ধরেনি। তার অভিভাবক নজরুল ইসলামও বাড়িতে ছিলেন না। সূচির মা সাংবাদিক পরিচয় পেয়েও ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। অবস্থাদৃষ্টে গোটা পরিবারটির মাঝে এক অজানা আতংক বিরাজ করছে। কেননা প্রভাবশালীদের অব্যাহত চাপে অসহায় পরিবারটি আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল ইসলামের সাথে সাংবাদিকদের কথা হলে তিনি বলেন,‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। আমরা যথাযথ গুরুত্বের সাথেই দেখছি। ইতিমধ্যে ১ আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিকটিমের ডাক্তারী পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তার জবানবন্দি বিজ্ঞ আদালতে রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্তকাজে গতি আনার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা মতলব উত্তর থানা অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মাহবুবুর রহমানকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে’। এছাড়া চাঁদপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কাজী হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ‘আইন অনুযায়ী মামলার তদন্ত কার্যক্রম তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। এখানে পক্ষপাতিত্ব করার কোন সুযোগ নেই। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধের সাথে জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে’।