কাজী মোরশেদ আলম
প্রতিনিধিরা সমাজে নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি হতে হলে যে কোন বৈধ উপায় স্বীকৃতি পেতে হয়। মোট কথা নির্বাচিত ব্যক্তিদেরকে প্রতিনিধি বলা যায়। প্রতিনিধিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে অর্পিত কার্যাবলী পরিচালনা করা। যিনি প্রতিনিধি হবেন বা যাকে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হবে, তাকে সৎগুণের অধিকারী হতে হবে। ইতিবাচক গুণাবলি না থাকলে প্রতিনিধি তাঁর অর্পিত দায়িত্ব সমূহ সুন্দর ভাবে সম্পাদন করতে পারে না। যেখানে বা যে অঞ্চলে প্রতিনিধি থাকে সেখানে অবশ্যই রীতি নীতি ও সংবিধান থাকে। সংবিধান অনুযায়ী সমাজের সমুদয় কাজ পরিচালনা করতে হয়। সংবিধানের অপব্যাখ্যা করে বা সংবিধান বিকৃতি করে নিজ স্বার্থের জন্য কাজ করা কোন মতেই ঠিক না। প্রতিনিধির কাজ করতে হবে দেশের মানুষের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য এবং শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। অবৈধ উপায় প্রতিনিধি হয়ে সমাজে কাজ করতে গেলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। অবৈধ উপায় প্রতিনিধি হলে এমন বির্তকিত প্রতিনিধির প্রতি আনুগত্য থাকে না বলে প্রতিনিধি ক্ষমতা প্রয়োগ করে অআনুগত্য নাগরিকদের হয়রানী ও নির্যাতন করে। ফলে প্রতিনিধির কার্যাবলী প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এক সময় যখন ক্ষমতা থাকবে না প্রতিনিধিরা তখন ভীষণ চাপের মধ্যে পড়বে। কাজেই প্রথাগত নিয়মে নির্বাচিত বা মনোনিত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা বাঞ্চনীয়। দেশে আজ রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশ মহা সংকটের মধ্যে ঘূর্ণায়মান। সংকটের সমঝোতা হচ্ছে না কোনমতেই। হানাহানি, সহিংসতা বেড়েই চলছে দিন দিন। কোন শান্তির বাণি, মিলনের বাণি, সমঝোতার বাণি কর্ণগুহরে প্রবেশ করছে না। পেট্রোল বোমার আঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়ছে নিরিহ মানুষ। আহতরা অতলান্ত যন্ত্রণায় বার্ণ হাসপাতালগুলোতে গুলিবিদ্ধ আহত পাখির মতো কাৎরাচ্ছে। কি এক বিভৎস দৃশ্য! কারা এহেন জঘন্য কাজ করছে? আমাদের কাছে তা ঘোলাটে। এক দল আরেক দলকে দোষ দিচ্ছে। এক দল বলছে চলমান আন্দোলনকে পণ্ড করতে এসব ধ্বংসাত্বক কাজ চালানো হচ্ছে। দেশের মানুষের জীবন যাত্রা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। খেঁটে খাওয়া মানুষের রুজি রোজগার বন্ধ। দেশ এক অজানা অন্ধকার কূপে ধাবিত হচ্ছে শুধু মাত্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে। এ অবস্থা থেকে কোন শক্তি রেহাই দিবে? তীর্থের কাকের মতো দেশের মানুষ অপেক্ষায় আছে। কেউ এগিয়ে আসছে না এহেন সমস্যা সমাধানে। হয়তো এগিয়ে আসার পথ বন্ধ। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না ক্ষমতা অনিত্য নয়, ক্ষমতা অস্থায়ী। ফেরাউনও ক্ষমতা ধরে রাখতে পারি নি। করুণ পরিণতি হয়েছে তার। ক্ষমতা নিয়ে লড়াই হবে তা স্বাভাবিক। তবে এ লড়াই হতে হবে বিধি সম্মত। গণতান্ত্রিক উপায় যে কেউ ক্ষমতায় আসুক তার প্রতি থাকবে পরম আনুগত্য। কিন্তু আনুগত্য নেই। কেন নেই? তার সমস্যার সমাধানও হচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে একটি গল্প বলা যাক। একটি শ্রেণি কক্ষে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্য থেকে ক্লাস প্রধান নির্বাচন করা হবে। শিক্ষক ক্লাস প্রধান নির্বাচনের জন্য দিন তারিথ নির্ধারণ করে দেয়। একজন ছাত্র দাবী পেশ করল, বর্তমানে যে ছাত্রটি ক্লাস প্রধান তাকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগের পর অন্য একজনকে আপতত কয়েকদিনের জন্য শ্রেণি প্রধান বানিয়ে দেয়া হোক। তার অধীনে ক্লাস পরিচালিত হবে। না হয় বর্তমান শ্রেণি প্রধান নিরীহ ছাত্র ছাত্রীদের উপর বল প্রয়োগ করবে তাকে নির্বাচিত করার জন্য। বর্তমান ক্লাস প্রধান এই দাবী মানতে রাজি নন। এতে সব ছাত্র-ছাত্রীরা দাবী আদায়ের জন্য আন্দোলনে মেতে উঠল। আন্দোলনে অনেক ক্ষতি হল। বিদ্যালয়ের অবস্থা যায় যায়। পরিশেষে চাপের মুখে বর্তমান ক্লাস প্রধান পদত্যাগ করল। একটি ছাত্রকে কয়েকদিনের জন্য ক্লাস প্রধান বানিয়ে দিলেন। তার সঞ্চালনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয়। যে ছাত্রটি বর্তমান ক্লাস প্রধানকে পদত্যাগ করার দাবি করেছিল সেই ছাত্রটি ক্লাস প্রধান নির্বাচিত হয়। এক বছর পর আবার শ্রেণি প্রধান নির্বাচনের সময় হলো। সময়ের কিছু দিন আগে নির্বাচিত ক্লাস প্রধান নিয়ম করল তাঁর অধিনে ক্লাস প্রধান নির্বাচন হবে। এতে গত বছরের পরাজিত প্রার্থী একদম মানতে রাজি নন। তার মতে গত বছরের যে নিয়ম ছিল সে নিয়মে নির্বাচন হবে। ক্লাস প্রধান তা অগ্রাহ্য করে নির্বাচন দিল। নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী অংশ গ্রহণ না করায় বিনা ভোটে সে নির্বাচিত হয়। ফলশ্র“তিতে বিদ্যালয়ে তুলকালামকাণ্ড ঘটে যাচ্ছে। কি যে অবস্থা! পড়ালেখার পরিবেশ একদম নেই। অভোটে নির্বাচিত প্রার্থী কোন পদত্যাগ করছে না। বিদ্যালয়টির কাঠামো ভেঙ্গে গেছে প্রায়। ইতিমধ্যে দাঙ্গায় ককেজন ছাত্র মারা যায়। হাহাকারের ধ্বনি বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এহেন ঘটনা ম্যানিজিং কমিটিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। এলাকার এক বৃদ্ধ লোক অভোটে নির্বাচিত ক্লাস প্রধানকে বলল-‘বাবা তুমি এর আগে আন্দোলন করে যে নিয়ম প্রচলন করলে সে নিয়ম অনুযায়ী তুমি নির্বাচিত হয়েছো। এখন পরাজিত ছাত্রটির বেলায় সে নিয়ম কেন বাতিল করলে? নিশ্চই তোমার অধীনে নির্বাচন হলে তুমি আবার বিজয়ী হবে তা-ই এমনটি করেছো, তাই না? পরাজিত প্রার্থীর অধীনে তুমি কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে রাজী থাকতে? নিশ্চই না। কাজেই আগের যে নিয়ম ছিল তা প্রচলন করো। যে কেউ নির্বাচিত হোক। তাতে কারোর আপত্তি থাকবে না। বিদ্যালয়ে শুন্দর পরিবেশ বিরাজ করবে। নির্বাচিত ছাত্রটি বৃদ্ধের কথা শুনিনি।
আজ দেশের চিত্র ভয়াবহ। এই ভয়াবহ পূর্বেও দেখিছি। দেশের সর্বত্র একই সাথে কারা বোমাবাজি করেছিল? কারা বটমুলে বোমা নিক্ষেপ করেছিল? কারা ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করেছিল? এসব অনাকাংখিত ঘটনা শুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে বিচার কার্য সম্পন্ন করতে হবে। আর এই বিচারকার্য সম্পাদন করার জন্য বিচার বিভাগকে দিতে হবে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। বিচারকার্য যদি রাজনৈতিক নেতারা করেন তাহলে জঙ্গীবাদের তৎপরতা আরো বেড়ে যাবে। দেশে জঙ্গীবাদদের আস্তানাগাড়া নির্মুল হবে না। পূর্বে পেট্রোল বোমার কথা শুনেনি। বর্তমানে প্রতিদিনই পেট্রোল বোমা মেরে যানবাহনে আগুন লাগানো হচ্ছে। যাত্রীরা আগুনে পুড়ছে এবং মর্মান্তিক মৃত্যু হচ্ছে। কারা এই পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে? তা চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। রাজনৈতিক ভাবে তদন্ত করলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে না। তদন্তের ভার দিতে হবে সেনাবাহিনীর উপর। দেশের অতলান্ত সংকটময় মূহুর্ত্বে এমন একটি শক্তি এগিয়ে আসার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি। সমস্যা সমাধান নিরসনে দেশের দায়িত্ব হাতে তুলে নিন। বিচার বিভাগকে শক্তিশালি করুন। বিচারকদেরকে অনেক অনেক ক্ষমতা প্রদান করুন। নিশ্চই রাজনৈতিক অস্থিরতা দুর হবে। দলীয়করণ বন্ধ হবে। দেশ পরিচালিত হবে একটি নির্ভুল রেখায়।