আমার কণ্ঠ রিপোর্ট
প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় জেলার মধ্য জায়গায় করার দাবী উঠেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। জেলার এক কর্ণারে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করা হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যাতায়াতের অসুবিধা হবে। যে জায়গায় প্রস্তাব করা হয়েছে সে জায়গায় জেলার একটি ইউনিয়ন বা নদী সিমান্ত এলাকায়। সে জায়গায় নেই ভালো সড়ক বা রেল পথ। জেলার মধ্য জায়গায় বা পূর্ব অঞ্চলে হলে জেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হাজীগঞ্জ, এছাড়াও হাজীগঞ্জের সাথে কুমিল্লা,নোয়াখালি, লক্ষীপুর, গৌরপুরের সাথে সড়ক ও রেল যোগা-যোগ রয়েছে। এ উপজেলায় প্রতিষ্ঠানটি হলে সবাই উপকৃত হবে।
জেলার মধ্যবর্তী স্থান হওয়ায় এবং সড়কপথ,রেলপথ ও নৌ-পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হাজীগঞ্জে স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন হাজীগঞ্জের রাজনীতিবীদ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ছাত্র ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ। লকডাউন পরর্বতী সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বর্তমানে এই দাবী জোরালো হয়ে উঠে।
জানা গেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব প্রদানসহ পাঠন ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণকল্পে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য গত বছরের (২০২০) ৯ সেপ্টেম্বর সংসদে বিল পাস হয়। এর আগে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৯ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারী ড. মো. নাছিম আখতারকে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভাইস চ্যান্সেলর) নিয়োগ দেয় সরকার। পরবর্তী সময়ে মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এবং দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় বিষয়টি নিয়ে নিশ্চুপ ছিল সবাই। তবে লকডাউন তুলে নেওয়ার পর এবং বর্তমানে জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ায় হাজীগঞ্জে ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের দাবীটি জোরালো হয়ে উঠে।
জানা গেছে, চাঁদপুর জেলার ব্যবসায়ীক প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে হাজীগঞ্জ। শিক্ষা, ধর্ম-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে হাজীগঞ্জ বাজার। এ উপজেলায় রয়েছে উপমহাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ ‘হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ’। যে মসজিদটির কারণে উপমহাদেশে হাজীগঞ্জ উপজেলাটি সমাধিক পরিচিত।
জেলার মধ্যবর্তী স্থান হওয়ায় এবং সড়ক, রেল ও নৌ-পথ থাকায় হাজীগঞ্জে রয়েছে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিশেষ হাজীগঞ্জ উপজেলার সাথে জেলার ৭টি উপজেলার মানুষ সহজেই হাজীগঞ্জ উপজেলায় যাতায়াত করতে পারেন।
এর পাশা-পাশি হাজীগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ-কচুয়া-সাচার-দাউদকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক হওয়ায় পাশ্ববর্তী জেলার লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার লোকজন এবং হাজীগঞ্জের উপর দিয়ে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটি হওয়ায় চাঁদপুরের সকল মানুষসহ কুমিল্লা জেলার পশ্চিমাঞ্চলের লোকজন এবং গৌরপুরের লোকজন হাজীগঞ্জে সহজেই যাতায়াত করতে পারেন। তাই হাজীগঞ্জে ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়’ দাবী করেন উপজেলাবাসী।
এ ছাড়াও যে স্থানটি ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি হলো চাঁদপুর জেলার লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নে (চর বহরিয়া)। এটি একটি নদী ভাঙ্গন এলাকা হিসেবে ঝুঁজিপূর্ণ। তা ছাড়াও এর আশে-পাশে যোগা-যোগা ব্যবস্থাও অপ্রতুল। এর দক্ষিণে হাইমচর উপজেলা ও পশ্চিমে মেঘনা নদী। যেকোন সময় ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়’ এর জন্য প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত স্থান নদী গর্ভে বিলিন হতে পারে।
হাজীগঞ্জে ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়’ নির্মাণ প্রসঙ্গে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রোটা আহসান হাবিব অরুন বলেন, হাজীগঞ্জ উপজেলাটি চাঁদপুর জেলার মধ্যবর্তী স্থানে। এ উপজেলার সাথে ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর সদর, মতলব, কচুয়া, শাহরাস্তি উপজেলাসহ আশে-পাশে কয়েকটি জেলার উন্নত রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।
এ ছাড়াও চাঁদপুরে যেখানে ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়’ হওয়ার কথা আমরা শুনতেছি সেটি একটি নদী ভাঙ্গন এলাকা। সেখানে ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়’টি নির্মাণ হলে ১৫/২০ বছরের মধ্যেই সেটি নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে স্থানে ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়’টি হচ্ছে সেটি একটি চর এলাকা।
হাজীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ সৈয়দ আহমদ খসরু বলেন, ভৌগলিক দিক থেকে হাজীগঞ্জ উপজেলার অবস্থান জেলার মধ্যবর্তী স্থানে। এখানে ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়’ স্থাপন হলে চাঁদপুর জেলাসহ লক্ষীপুর, নোয়াখালি ও কুমিল্লার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপকৃত হবে। এছাড়াও চাঁদপুর একটি নদী ভাঙ্গন প্রবন এলাকা। যদি এটি চাঁদপুরে স্থাপন হয়। চাঁদপুরের পশ্চিমাঞ্চলে পদ্মা-মেঘন নদীর অবস্থান। সুতরাং ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়’ হাজীগঞ্জে হওয়ায় যুক্তিযুক্ত।
হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আসফাকুল আলম চৌধুরী বলেন, হাজীগঞ্জ উপজেলাটি জেলার একটি মধ্যমনি। এটি যদি হাজীগঞ্জে হয় তাহলে জেলার আরো ৭টি উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী লক্ষীপুর, নোয়াখালি ও কুমিল্লা জেলার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপকৃত হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীকভাবে হাজীগঞ্জ উপজেলা চাঁদপুরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু ছাইদ বলেন, শিক্ষার জন্য হাজীগঞ্জ একটি উর্বর এলাকা। যদি ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ হাজীগঞ্জে হয় তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে হাজীগঞ্জ আরো সমৃদ্ধ হবে এবং পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠান যদি জেলা একটি কর্ণারে হয় তাহলে বৃহত্তর ছাত্র-ছাত্রীদের কোন উপকারে আসবে না। তাই জেলা মধ্য জায়গায় হলে চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলার ছাত্র-ছাত্রীর উপকার হবে।