সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন
মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের সঙ্গে আমার পরিচয়ের সুযোগ হয়েছিল দেড়যুগেরও বেশি সময় পূর্বে হাজীগঞ্জ সবুজ সংঘের একটি মহতি অনুষ্ঠান- রক্তদান কর্মসূচীতে। কিছু মত-বিনিময়ের পর ওনার ধানমন্ডির বাসায় আমাকে যেতে বলেন। পরবর্তী সাক্ষাতে তিনি হাজীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণসংযোগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমি তখন হাজীগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি। প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পৌর এলাকায় আমাদের কমিটি আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক হওয়ার সুযোগ পেত। আওয়ামীলীগের ত্যাগী, সৎ ও যোগ্য নেতাদের নেতৃত্বে থানার প্রত্যেকটি এলাকায় গ্রামে-গ্রামে পর্যন্ত শক্তিশালী সংগঠনের জন্য নিবেদিত প্রাণ কর্মী বাহিনীর সমন্বয়ে গ্রাম কমিটি ছিল। শ্রমিকলীগ, রিক্সা শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা ও অংশ গ্রহণ করে আমাদের সাহস যোগাতো। বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ সংগঠনে বিভিন্ন পেশার সৎ, নিষ্ঠাবান, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল মানুষকে এক করে একটি যুগপোযোগী সংগঠন গড়ে তোলেন। শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ হাজীগঞ্জের আওয়ামী পরিবারের স্কুল পড়–য়া কিছু ছাত্রের দুঃসাহসী উদ্যোগে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্যজনক উপস্থিতিতে সাধারণ জনগণ ও ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে এর শাখা বিভিন্ন অঞ্চলে গঠিত হয়। যার ফলে থানা ছাত্রলীগ অনেক বেশি শক্তিশালী সংগঠনে পরিনত হয়। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ হাজীগঞ্জ থানার কয়েকটি এলাকায় সংগঠিত হয়ে কাজ করে। যে কারণে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা উজ্জিবীত হয়। শাপলা কুড়ির আসর, বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর সংগঠনের সদস্যরা হাজীগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ ভূমিকা রেখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে আওয়ামী পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করে। কৃষকলীগ গ্রামাঞ্চলে তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে খেটে খাওয়া মানুষদের নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো। যুবলীগ পৌর এলাকাসহ থানার বিভিন্ন ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা নেয়।
থানা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রত্যেকটি কর্মসূচীতে সকল অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভাই-ভাই হিসেবে কোন প্রকার লোভ লালসা চাওয়া পাওয়াকে উপেক্ষা করে একযোগে কাজ করে। শুধু বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা নয় সারা বাংলাদেশে হাজীগঞ্জের আওয়ামী পরিবারের ব্যাপক সুনাম ও শক্তিশালী অবস্থানের কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামীলীগের সভানেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রের সকল নেতৃবৃন্দের জানা ছিল। হাজীগঞ্জের সরাসরি যোগাযোগ ছিল কেন্দ্রের (ঢাকার) সাথে। চাঁদপুরে বসে কোন কমিটি তখন দেওয়া হতো না। হাজীগঞ্জের কমিটি হাজীগঞ্জে সভা করে সকলে বসে করা হতো। বি.বি.সি, ভয়েস অব আমেরিকায় নেত্রীর (শেখ হাসিনার) স্বৈরাচারী বিএনপি সরকার বিরোধী কর্মসূচী জানামাত্র হাজীগঞ্জের রাস্তায় মিছিল, বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতো। বিএনপি সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন, মামলা, হামলা, সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে লুটপাট, হত্যাচেষ্টা, অপহরণ, দুর্ণীতি, চাঁদাবাজি, দলীয়করণ ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। এসকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে সকল অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের বিশাল কর্মী বাহিনীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল প্রগতিশীল মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বিএনপি ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলি এবং আমাদের আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের হাজার হাজার কর্মী বাহিনীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহন করে ও সমর্থন দেয় এবং সাহায্য সহযোগিতা করে।
মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের সাথে আমার প্রথম প্রোগ্রাম হাজীগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। এলাকার জনগণ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার, তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, জাতীয় ব্যক্তিত্বকে কাছে পেয়ে অনেক আনন্দিত ও উৎফুল্ল। তিনি এলাকবাসীকে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার এই সফরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ, আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মী সমর্থক, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক প্রবীন মুরুব্বিরাসহ সাধারণ জনগণকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। পুরোপুরি সফল প্রোগ্রাম। এরপর মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম মহোদয় আমাকে তার ব্যক্তিগত প্যাডে প্রোগ্রামের সফলতায় ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেন। যা আমার কাছে আজও স্মৃতি হয়ে জ্বলজ্বল করছে। এই চিঠি আমার জন্য সার্টিফিকেট। আরেক চিঠি বি.ডি.আর বিদ্রোহে স্ত্রীসহ নিহত (শহীদ) শাহরাস্তি নিবাসী কর্ণেল দেলোয়ার সাহেবের স্ব হস্তে লেখা। তিনি আমার কাছে হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন তথ্য চেয়েছিলেন। চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন শাহরাস্তি থানা ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি মান্নানের মাধ্যমে। সঙ্গে নগদ ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। প্রয়াত কর্ণেল দেলোয়ার সাহেবের চিঠিটি আমি স্মৃতি হিসেবে স্বযতেœ রেখে দিয়েছি। ঘাতকের ভয়াল বুলেটে তিনি অকাল প্রয়াত হয়েছেন। এই বীর সেনানী ও তার স্ত্রীসহ বি.ডি.আর বিদ্রোহে অকাল প্রয়াত সকল বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। মহান স্রষ্ঠার কাছে তাদের পরিবার পরিজনসহ সকলের মঙ্গলের জন্য করজোড়ে প্রার্থনা করি স্রষ্ঠা যেন সকলকে এই বিরাট শোক সইবার ক্ষমতা দেন।
মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম হাজীগঞ্জে গণসংযোগ শুরু করার পর থেকেই আওয়ামীলীগের সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে তিনি আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হবেন। অল্প দিনে তা ব্যাপক প্রচার পায় এবং বিভিন্ন স্থানে তার বক্তব্য, কথাবার্তা, আলাপ আলোচনা সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে স্থান করে নেয়। আওয়ামীলীগের কর্মীরা ভাবতে শুরু করে তিনি নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করলে নিশ্চিত বিজয় লাভ করবেন এবং মন্ত্রীত্ব পাবেন। হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির মানুষকে আর অবহেলার মধ্যে অনুন্নত জীবন যাপন করতে হবেনা। রাস্তাঘাট পাকা হবে। বাঁশের সাকো থাকবে না। পাকা ব্রীজ কালভার্ট হবে, ঘরে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌছবে, স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় সু-উচ্চ পাকা ভবন হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পৌছবে। কথায় কথায় মামলা হামলা দলীয় করণ চলবে না। আইন শৃঙ্খলার উন্নতি হয়ে সন্ত্রাস নির্মূল হবে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রাহাজানি, নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিস্তার রোধ হবে, মৌলবাদ ধর্মান্ধতা বাধাগ্রস্ত হবে। তার যোগ্য নেতৃত্বে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে অর্ধশত বছর এগিয়ে যাবে।
হ্যাঁ ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে জননেত্রী, মুজিব কন্যা আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তৎকালীন বিএনপি সরকারের সন্ত্রাস, দলীয়করণে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হওয়া বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কঠোর হস্তে দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করেন। সারাদেশে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। চাঁদপুরের মানুষ সারাদেশে মেজর রফিকের এলাকার মানুষ হিসেবে সম্মানিত হয়। হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বিদ্যুৎ বিক্রি, থানা বিক্রি, নিম্নমানের ইট, পাথর, রড, সিমেন্ট, বালু দিয়ে স্থাপনা-রাস্তা নির্মান, দলীয়করণ অন্যায়ভাবে মামলা হামলা সব বন্ধ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীতায় মেজর রফিকের অক্লান্ত শ্রম, চেষ্টা, সফলতায় হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির প্রত্যেকটি এলাকায় উন্নয়ন কর্মকান্ড চলতে থাকে। এলাকার মানুষ নূতন বড় বড় ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ মাদ্রাসার সুন্দর এবং সু-উচ্চ ভবন, গ্রামের নূতন হাসপাতাল, বন্যার সময়ে উচু আশ্রয় কেন্দ্র, ঘরে ঘরে বিদ্যুতের নূতন সংযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের নূতন ভবন, গ্রামে গ্রামে গভীর নলকূপ স্থাপন, জনগণ যেখানে ৫০ বছর পরেও পাকা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারবে বলে ভাবেনি সে সকল রাস্তা পাকাকরণ, ডাকাতিয়া নদীর উপর শত কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি ব্রীজ নির্মান, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, প্রশাসনিক ভবনে কম্পিউটার সিষ্টেম (ডিজিটাল পদ্বতি চালু) ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ। সরকারী খরচে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পবিত্র হজ্বে প্রেরণ, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, দুস্থ মহিলাদের মধ্যে চাল, বস্ত্র, শীত বস্ত্র প্রদান, সাধারণ মানুষকে ঘর নির্মান করে দেওয়া, টিন প্রদান, বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বৃত্তির ব্যবস্থা, এতিম অনাথদের সাহায্য করা এ সকল কর্মকান্ড মেজর রফিকের হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে উন্নয়নের বাস্তব রূপ দেওয়ার চিন্তা চেতনার সামান্য অংশ মাত্র।
জনগণের বিশ্বাস সাধারণ মানুষের কল্যাণে তার অগ্র যাত্রা অব্যহত থাকবে। গত সপ্তাহে হাজীগঞ্জ নিবাসী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রাক্তন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রবীন রাজনীতিবিদ নুরুল ইসলাম সাহেবের এক ঘনিষ্ট আত্মীয় ক্যান্সারে আক্রান্ত ৪ বছরের এক শিশুর সু-চিকিৎসায় আর্থিক সহযোগিতার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে লিখিত আবেদন পত্রে সুপারিশ পাওয়ার জন্য এম.পি মহোদয়ের (মেজর অবঃ রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম) অনুমতিক্রমে জাতীয় সংসদ ভবনের অফিস কক্ষে সাক্ষাতের সুযোগ হয়। তিনি আমার কি বলার আছে জানতে চাইলে আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুটির পিতার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে লিখিত আবেদন খানা তাঁহার কাছে দেওয়ার পর তিনি পরম মমতার সহিত আবেদন খানা গ্রহণ করেন এবং সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বললেন এবং আমাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলেন। পরের দিনই তিনি সকল কাগজ প্রস্তুত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌছানোর নির্দেশ দেন। যাতে শিশুটি এই কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে দীর্ঘ জীবন লাভ করে। আমার মনে আছে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সরকারী বাসভবন বেইলী রোডে হাজীগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের একটি সভা হয়েছিল, সেই সভায় আমি আমাদের মকিমাবাদ গ্রামের একটি শিশুর চোখের সমস্যা তুলে ধরেছিলাম। সাথে সাথে ব্যবস্থা নিয়ে পরদিনই ঐ শিশুর বাবার চাহিদা মত তার হাতে তিনি ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছিলেন। তার এই মহানুভবতায় আজ ঐ শিশু সুস্থ্য অবস্থায় অনেক বড় হয়ে দুনিয়ার আলো দেখতে পাচ্ছে। এরকম হাজার সমস্যার মুখোমুখী হয়ে তিনি সাধারণ মানুষের ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখের সাথী থেকে দীর্ঘ জীবন লাভ করবেন বলেই সাধারণের বিশ্বাস।
১লা মার্চ ২০১৫ইং হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নব নির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বক্তব্য রেখেছেন। আমার এ অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ ছিল, পারিবারিক অসুবিধার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি বলে খারাপ লেগেছে। পবিত্র পেশায় নিয়োজিত সাংবাদিকদের অনুষ্ঠান যারা জীবন বাজি রেখে, কঠোর পরিশ্রম করে, শত লোভ লালসাকে পিছনে ফেলে, জনগণের দৈনন্দিন জীবনের অভাব, অভিযোগ, অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন, সার্বিক উন্নয়ন, কল্যাণমূলক কাজ আয়নার মত স্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্য দৃঢ় চিত্তে কাজ করে যান তাদের এই সুন্দর অনুষ্ঠানে না যেতে পারলেও মেজর রফিকের মূল্যবান বক্তব্য উপস্থিত শ্রোতাদের কাছ থেকে মন দিয়ে শুনেছি। মেজর রফিক বরাবরই প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার অভিভাবক (বন্ধু)। আমি দেখেছি কোন অনুষ্ঠানে, গণ সংযোগে তিনি গেলে কোথাও কোন খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে খেতে যাওয়ার পূর্বে তিনি মিডিয়ার প্রতিনিধি, প্রশাসনের প্রতিনিধি, গাড়ী-রিক্সার সংশ্লিষ্ট চালক এদের সকলের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে কিনা জেনে নিতেন। হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের অভিষেক অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি সকল সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সাংবাদিকরা যাতে বিভক্ত না হন এমন পরামর্শ দিয়ে দূর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য মত প্রকাশ করেন। মেজর রফিক সাংবাদিকদের তাদের লেখনির মাধ্যমে উন্নয়ন খাতের দূর্নীতিবাজ সরকারী সম্পত্তি অন্যায়ভাবে দখলে রাখা, আত্মসাত, বিদ্যুৎ সংযোগের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি, শিক্ষক নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য এসকল দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী তথ্য নির্ভর সংবাদ প্রকাশ করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন সরকার জনগণের ট্যাক্সের টাকায় জনগণকে বিদ্যুৎ দিবে, আর এই বিদ্যুৎ নিয়ে কতিপয় লোক লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করবে তা হতে দেওয়া হবে না।
তিনি ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়া হবে বলে জানান। তিনি হাজীগঞ্জের টোরাগড়-বড়কুল এবং শাহরাস্তির সূচীপাড়ায় ডাকাতিয়া নদীর উপর আরো দুইটি ব্রীজ হবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি অনুষ্ঠানে হাজীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের জন্য স্থায়ী ভূমির ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। আমি আজকের এই লেখায় মেজর রফিকের রাজনৈতিক ও উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের তেমন কিছু উল্লেখ করতে পারিনি। পরবর্তীতে তার সাথে সম্পর্কিত আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের স্থানীয় ত্যাগী, সৎ, নির্ভিক কর্মী এবং প্রবীন নেতাদের নিয়ে লিখবো। সেখানে থাকবে মেজর রফিকের মতো বিশাল হৃদয়ের, মহান ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কর্মী হিসেবে কাজ করার অনেক দিনের অভিজ্ঞতা। বর্তমানে হাজীগঞ্জের সরকারি দলের এক নেতা কিছু দিন পূর্বে আমাকে বললেন, মিঠুন এখন মেজর সাহেবের রিক্সা ধাক্কাওনা? তাকে কিছু বলিনি কারণ আমিই তাকে অনেকের কথা অমান্য করে সংগঠনের পদ পদবীতে স্থান করে দিয়েছিলাম। যারা এক সময় কোন পদ পদবীতে ছিলোনা। তারা এখন বড় বড় পদে আর নূতন নূতন দলছুট কিংবা স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের লোকেরা এখন সরকারি দলের মাতব্বর। এরাই আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে আওয়ামীলীগের স্বার্থ বড়, না নিজের সুযোগ সুবিধা স্বার্থই বড়।
বিএনপি-জামাতের বর্তমান পেট্রোলবোমা নির্ভর আন্দোলনে হাজীগঞ্জের রামচন্দ্রপুর, বলাখাল, বেলচোঁ, সেন্দ্রা, টোরাগড়, এনায়েতপুর, জনতাবাজার, বাকিলা, দেবপুর, পাতানিশ, রাজাপুর, বেলঘরসহ অনেক স্থানে আওয়ামীলীগের কর্মীরা নির্যাতীত হয়েছে সাহসী নেতৃত্বের অভাব ও কিছু কিছু স্থানে লোভী নেতৃত্বের কারণে। তাদের যেকোন সময় যেকোন ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর উপর নির্ভরতা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। এমনকি পুুলিশ বাহিনী দ্বারা ধৃত বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীদের ছাড়িয়ে নিতে অন্যায়মূলক তৎপরতায় তাদের জুড়ি নেই। মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের কঠোর মনোভাবের কারণেই থানায় তদবীরকারী নেতারা অনেকেই পিছু হটেছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমর্থক ও সাধারণ জনগণের কঠোর পরিশ্রমের পরেও ভাইস চেয়ারম্যান পদ হারানোর জন্য সংগঠনে নূতন করে পদ পদবী পাওয়া, কালো টাকাওয়ালা, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামীলীগের আদর্শ উদ্দেশ্য সম্পর্কে অজ্ঞ নব্য মৌলবাদী চেতনার কিছু সংখ্যক ব্যক্তি আওয়ামীলীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অন্য দলের (জামাত) প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কালো টাকা ছড়িয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর নিশ্চিত বিজয় ম্লান করে দেয়। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে কেউ কেউ অন্য প্রার্থীর কাছে টাকায় বিক্রি হয়ে আওয়ামীলীগ মনোনীত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অল্প ভোটের ব্যবধানে হারতে বাধ্য করে। একটি নিশ্চিত বিজয় থেকে বঞ্চিত করে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী সমর্থকদের। এই ঘটনা হাজীগঞ্জের আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে রচিত থাকবে।
অন্যদিকে আমার ছাত্র রাজনীতির সহযোদ্ধা কলম বন্ধু সাপ্তাহিক আমার কন্ঠ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন ২০০১ সালে দায়িত্ব পালন কালে নিজ দলের লোকদের হাতে নির্যাতিত হন। তখন হাজীগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনালের মিডওয়ে হাসপাতালে তাকে দেখতে যান প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম। তিনি তাকে সান্ত্বনা ও চিকিৎসার খরচ দেন। ২০১১ সালে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও সরকারী আমলাদের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করায় তাকে ডেকে নিয়ে হাজীগঞ্জ বাজারে শারীরিক নির্যাতনসহ হুমকি প্রদর্শন করা হয়। তারপরেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তার কলম থেমে নেই।
এখন আওয়ামীলীগের ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির উন্নয়ন ও শান্তির রূপকার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের নেতৃত্বে দুর্ণীতিবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামীতে সকল নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামীলীগ সভানেত্রী, দেশরত্ম, জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত (আওয়ামীলীগ মনোনীত) প্রার্থীর পক্ষে একযোগে কাজ করে বিজয়ী হওয়ার। যেখানে সংগঠনের সকলের প্রতি সকলের শ্রদ্ধা, ভালবাসা, আত্মবিশ্বাস থাকবে। অবহেলিত, বঞ্চিত, সাধারণ কর্মীদের মধ্যে হতাশা থাকবেনা, তাদের মুখে সূর্যের হাসি ফুটে উঠবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে নিজের জীবনকে বাজী রেখে যিনি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে শত্র“মুক্ত করে বিশ্বের মানচিত্রে আমাদেরকে একটি দেশ, একটি পতাকা, সোনার বাংলা উপহার দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী সেক্টর কমান্ডার, জাতির গর্বিত সন্তান, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এম.পির নেতৃত্বে।
সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন
প্রাক্তন সভাপতি
হাজীগঞ্জ থানা ছাত্রলীগ
জেলা- চাঁদপুর।