গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নিয়েই মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এবার দল থেকে বহিষ্কারের পর তিনি মেয়র পদে থাকতে পারবেন কি-না, এ নিয়ে আইনি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার সংশ্নিষ্ট আইনজ্ঞরা বলছেন, মেয়র জাহাঙ্গীর বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা করেছেন, যা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তবে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা ) আইন ২০০৯ এর কোথায়ও দলীয় সমর্থন হারালে মেয়র পদ শূন্য হবে- এমনটি বলা নেই, যেটি সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। তাই এ নিয়ে আইনি জটিলতা বা অস্পষ্টতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হতে পারে বলে মত দিয়েছেন আইনজ্ঞরা।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক সমকালকে বলেন, সিটি করপোরেশন আইনে মেয়র পদ যেসব কারণে শূন্য হবে, সেখানে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার শর্ত নেই। তাই আপাত দৃষ্টিতে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার কারণে জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ শূন্য হবে- এ সংক্রান্ত কোনো স্পষ্ট বিধান আইনে নেই। তাই শুধু দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার কারণে তাকে মেয়রের পদ থেকে সরানো যাবে না বলে মনে হচ্ছে। তবে আইনে অস্পষ্টতা থাকার অর্থ এই নয় যে, আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। যেখানে আইনে অস্পষ্টতা আছে, সেখানে কী হবে সেটা নির্ধারণের ক্ষমতা উচ্চ আদালতের।
স্থানীয় সরকার বিভাগরে সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, এটি আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর দল তাকে বহিষ্কার করলে, তার মেয়র পদ শূন্য হবে কি-না, তা আইনে স্পষ্ট নেই। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন ও অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, আইনে এ বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। যে কারণে মেয়রের পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে হয়ত অপসারণ করা যাবে না। তবে কোনো ব্যক্তি যদি তার বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হন, তাহলে বিষয়টি নিয়ে তিনি উচ্চ আদালতের দারস্থ হতে পারেন। এর কারণ স্থানীয় জনগণ তাকে দলীয় প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সমকালকে বলেন, বহিষ্কারের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আমি এখনও জানি না। বহিষ্কারের পরে মেয়র পদে থাকতে পারেন কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয় মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি কটূক্তি করে দল থেকে কারণ দর্শানো এ নেতাকে দলের পদ থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে জাহাঙ্গীরকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করে দেওয়া গাজীপুর সিটি মেয়রের বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। মেয়র থেকে পদত্যাগ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের দাবিতে গাজীপুর নগরের কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।