সম্পাদকীয়
নির্বিঘœ হোক এস এস সি পরীক্ষা
শুরু হওয়ার কথা ছিলো ২ ফেব্র“য়ারি থেকে শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই অধ্যায়ের পরীক্ষাটি। কিন্তু শুরু হলো শুক্রবার থেকে। এই ক’টি দিনও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জীবন থেকে মুকুলের মত ঝরে গেলো। কে ফিরিয়ে দেবে ওদের এই দিন গুলো? এর পরও আমাদের একান্ত কামনা যেনো এস এস সি পরীক্ষাটি নির্বিঘেœ, ভালোয় ভালোয় শেষ হতে পারে।
পত্রিকায় দেখলাম, বেগম খালেদা জিয়া রোববার থেকে ফের ৭২ ঘন্টার হরতাল ডেকেছেন, অবরোধও অব্যাহত আছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা-অভিভাবক খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের সামনে মানব বন্ধন করেছে এবং খালেদা জিয়ার কাছে স্মারক লিপি দিয়ে আবেদন জানিয়েছে, তিনি যেনো অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করেন। ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর মুখের দিকে তিনি যেনো দয়ার দৃষ্টিতে তাকান, এই করুণ আবেদনে বেগম জিয়া সাড়া দেন নি। গুলশানের কর্মকর্তারা স্মারক লিপি প্রদান কারিদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক ব্যবহারও করেন নি। তিনি কঠোর মনোভাবের পরিচয় দিয়ে বলেছেন, আন্দোলন চলবে।
এসব সহিংস বোমাবাজি, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষ পোড়ানো কোন ধরনের আন্দোলন তা বেগম জিয়াকে কে বোঝাবে? এহেন আত্মঘাতী, সার্বভৌমত্ব বিধ্বংসী আন্দোলন ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর মাধ্যমিক পরীক্ষা কোন পর্যায়ে নিয়ে যাবে, আদৌ পরীক্ষা সঠিক ও শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হতে পারবে কিনা তাও আমরা জানি না। গোটা জাতি এখন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ভয়ে বিপন্ন অবস্থার মধ্যেও এই অসহায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন আছে। পরীক্ষার্থীদের বুকের ভেতরেও আতঙ্কের কালো হাত প্রবেশ করেছে। তারা নিশঙ্ক চিত্তে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে তা হলো না, তারা একসঙ্গে পরীক্ষা কেমন হবে এবং জীবন বাঁচাতে পারবে কিনা সেই দুশ্চিন্তার কবলে পড়েছে। এই হতাশা ওদের বুকের সাহসকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে। ওরা কি এই জঙ্গী-বোমা বাজির কালো রাজনীতির কবলে পড়ে অকালে ঝরে পড়বে?
বেগম জিয়ার কাছে আমরা মানবতা ভিক্ষা চাই। আমরা তার দরবারে দয়া প্রার্থনা করে হাত বাড়িয়েছি, দয়া করুন, মানবতা ভিক্ষা দিন, ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর জীবনের ওপর কালির মত কালো অন্ধকার টেনে নামাবেন না।
প্রশাসনের লোকদের এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও লোকজনদেরও বলছি, দয়া করে ঘরে বসে তামাশা দেখবেন না। শুধু প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে নাকে তেল দিয়ে, নাসিকা গর্জন করে ঘুমাবেন না। অনেক আয়-উর্পাজন করেছেন আপনারা, এবার ঘর থেকে রাস্তায় নেমে পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। প্রশাসনেও আপনাদের শক্ত প্রতিপক্ষ আছে, একথা ভুলে যাবেন না। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নির্বিঘœ করার দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ অবস্থান নিয়েছে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জেট ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। আপনারা কী করছেন? বিল্পবী কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘তামাশা দেখার দিন নয় অদ্য।’ দয়া করে তামাশা দেখবেন না। রেস্টুরেন্টে বসে আয়েশ করে নান রুটি আর মাংস খেয়ে সময় কাটাবেন না।
‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ে দেখুন, কিভাবে তিনি ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুন থেকে মানুষকে রক্ষা করেছিলেন। আপনারাও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ করুন। দানবীয় রাজনীতি প্রতিহত করুন।