পূর্ব দিগন্তে ওঠা লাল সূর্যটি জানান দিয়েছে আজ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, পহেলা বৈশাখ। স্বাগত ১৪২৪ সন। গানে, কবিতায়, চিত্রকলায়, আচার-আচরণে দেশব্যাপী বরণ করা হবে নতুন বছরকে। মঙ্গলের প্রত্যাশায়, কল্যাণ কামনায় বেরোবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। শহর-নগর-গ্রাম-গঞ্জে বসবে বৈশাখী মেলা। পহেলা বৈশাখের প্রত্যুষে কোটি বাঙালির কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত হবে সেই উজ্জীবনী আবাহন, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’। যা কিছু জীর্ণ, পুরাতন, অকল্যাণকর—সব কিছু সুদূরে মিলিয়ে যাক, আর প্রাণের বন্যায় আনন্দের ডালি সাজিয়ে আসুক নতুন বছর।
বাংলা নববর্ষকে বরণের এই সংস্কৃতি চলে আসছে হাজার বছর ধরে। হাল খাতা, মিষ্টান্ন বিতরণ, ভালো ভালো খাবার পরিবেশন, মেলার আয়োজন—এসব বাংলার লোকায়ত ঐতিহ্যেরই অংশ। এই একটি দিনে বাংলার মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। নববর্ষের উৎসব হয়ে ওঠে সর্বজনীন। আজ কিছু ধর্মান্ধ মানুষ বাঙালির সুপ্রাচীন এই ঐতিহ্যকে অস্বীকার করতে চাইছে। সাম্প্রদায়িক বিভেদের দেয়াল তুলতে চাইছে। বাংলার মানুষ, বাঙালি সমাজ কোনোভাবেই তা মেনে নেবে না। তাই সব ভ্রুকুটি উপো করেই বাংলার প্রতিটি প্রান্তে প্রতিটি ঘরে উদ্যাপিত হবে নববর্ষের উৎসব। একইভাবে পৃথিবীর যেখানেই বাঙালির বসবাস রয়েছে সেখানেই দৃশ্যমান হবে এমন আয়োজন। প্রকাশ ঘটবে নিজের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি এক অকৃত্রিম ভালোবাসার।
প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক আয়োজনে দিবসটি উদ্যাপিত হবে। দিন শুরু হবে রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। বাঙালির সংস্কৃতি ধ্বংসের যে অপচেষ্টা তদানীন্তন পাকিস্তানে শুরু হয়েছিল, তার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে যে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছিল ছায়ানট, তা আজও বাঙালির এক অমলিন ঐতিহ্য হয়ে টিকে আছে। অন্যদিকে বাঙালির যে ঐতিহ্য আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে, সেই মঙ্গল শোভাযাত্রাও রয়েছে আরো বেশি বর্ণাঢ্য আয়োজনে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে পাকিস্তানি ভাবধারার কিছু মানুষ এখনো এই সমাজে রয়ে গেছে। তারা এসব আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তারা নববর্ষ উদ্যাপনের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। অতীতে বোমা হামলাও চালিয়েছে। কিন্তু সংস্কৃতির স্রোত, ঐতিহ্যের আকর্ষণ কখনো কারো ষড়যন্ত্র বা রক্তচু দেখে থেমে থাকে না। থাকবেও না। রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামবে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেবে লাখো বাঙালি। রাজধানীজুড়েই থাকবে উৎসবের আমেজ। থাকবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সারা দেশেই। বলা যায় না, হয়তো অন্ধকারের শক্তি তাদের আক্রোশ মেটাতে আবারও ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করতে পারে। এর মধ্যেই চট্টগ্রামে নববর্ষের দেয়ালচিত্রে কালি মেখে দেওয়া হয়েছে। তাই সবাইকে অপশক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীগুলোর রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আমরা আশা করি, বর্ষবরণ উৎসব উদ্যাপন নির্বিঘ্নই হবে।
আজকের এই বিশেষ দিনে সবার একটাই চাওয়া, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। ’ নববর্ষে আমাদের অগণিত পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীকে জানাই নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।