২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের অর্থপেডিক্স সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দলের চিকিৎসায় রিকশা চালক স্বপন গাজীর (৪৫) ৩৫ বছরের বাঁকা পা সোজা হয়েছে। তার পুরো চিকিৎসা করা হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
এই বাঁকা পা সোজা করতে শুধু অর্থপেডিক্স বিভাগ নয়, হাসপাতালের এনেস্থিসিয়া বিভাগ, মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট, ওটি নার্স ও স্টাফ, ওয়ার্ডের নার্স এবং অন্যান্য স্টাফরাও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে।
রিকশা চালক স্বপন চাঁদপুর সদর উপজেলার খুলিশাডুলি এলাকার মৃত ফজলুর রহমান গাজীর ছেলে। স্বপন গাজী বলেন, ‘৩৫ বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় আমার ডান পায়ের হাঁটু এবং পায়ের পিছনের অংশ পুড়ে যায়। এতে আমার ডান পা প্রায় পঙ্গু হয়ে যায়।
এ অবস্থায় নানা কাজের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছি দীর্ঘ ৩৫ বছর। সর্বশেষ এক পায়ে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু, টাকার অভাবে চিকিৎসা না করে এই পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবন কাটিয়েছি। আস্তে আস্তে যখন আমার পায়ের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল, তখন আমি শরণাপন্ন হই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে।’
‘সেখানকার অর্থপেডিক্স সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দল আমার আর্থিক অবস্থার কথা জানতে পেরে বিনা পয়সায় চিকিৎসার আশ্বাস দেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে গত ৮ অক্টোবর আমি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হই,’ বলেন স্বপন।
অর্থপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসক আনিসুর রহমান সূফী বলেন, ‘মেডিকেল পরিভাষায় স্বপন গাজী পোস্ট বার্ন কন্ট্রাকচার অর্থাৎ আগুনে পুড়ে শরীরের কোনো অংশ কুঁচকে যাওয়া রোগে ভুগছিলেন। এতে তার ডান পা হাঁটু বরাবর বাঁকা হয়ে কুঁচকে যায়। সেই বাঁকা পা নিয়ে তিনি ৩৫ বছর ধরে প্রতিবন্ধী জীবনের ঘানি টানছিলেন। সম্প্রতি তার সেই কুঁচকানো অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়। মেডিকেল পরিভাষায় একে মারজলিন আলসার বলে, যা ক্যান্সারের দিকে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শাহাদাত হোসেন ও সহকারী রেজিস্ট্রার ফরিদ আহমেদ চৌধুরীসহ একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা শুরু করি।’
আনিসুর রহমান সূফী আরও বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে সমস্ত পোড়া অংশ অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করি। যা যথেষ্ট জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল। পরে বাঁকা পা সোজা করি এবং আক্রান্ত স্থানের মাংস পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠাই। কারণ তার কোনো ক্যান্সারের অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা জানা দরকার ছিল। ঢাকা থেকে আসা রিপোর্টে দেখা যায় তার শরীরে ক্যান্সারের কোনো অস্তিত্ব নেই।’
‘এরপর আমরা রোগীকে নিয়মিত ফলোআপ করি এবং দ্বিতীয় দফা অপারেশনের উপযুক্ত হলে তার স্কিন গ্রাফট করি। এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ এবং স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন,’ বলেন আনিসুর রহমান সূফী।
অর্থপেডিক্স বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘স্বপন গাজী এখন নিজের দু পা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা শুরু করছেন। যা গত ৩৫ বছর যাবত তার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। তার পায়ের এই জটিল রোগ চাঁদপুরের বাইরে চিকিৎসা করতে হলে ব্যয় হতো প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো। কিন্তু, এই হাসপাতালে আমরা তাকে এক টাকাও খরচ করতে দেইনি।’
‘বরং তার চিকিৎসাসহ সব ধরনের ব্যয় আমরা হাসপাতাল থেকে বহন করেছি। এখন স্বপন গাজীর হাসিমুখ দেখে আমরাও আনন্দিত। এ যেন এক যুদ্ধ জয়ের আনন্দ,’ বলেন ডা. শাহাদাত হোসেন।