নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার সময় এজেন্টদের খামখেয়ালিপনার জন্য মোবাইল নাম্বার ভুল এন্ট্রির কারণে দুইশতাধিক ভাতাভোগীদের টাকা চলে গেছে অন্যের মোবাইলে। ভাতাভোগীরা পড়েছেন বিপাকে। সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভাতাভোগীরা।
এনিয়ে প্রতিদিন উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ভিড় করছেন ভুক্তভোগী ও তার স্বজনরা। নিজের নামের নগদ অ্যাকাউন্টে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ওয়েবসাইটে অন্যের মোবাইল নম্বর দেখে ভাতাভোগীদের অনেকে মন খারাপ করে হতাশায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। দুর-দূরান্ত থেকে ভাতাভোগীরা সমাজসেবা অফিসে আসলেও টাকা ফেরত পাবে কিনা তার কোনো সুরাহা করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মদন সমাজসেবা অফিস বলছে, সুবিধাভোগীদের নগদ অ্যাকাউন্ট নগদ এজেন্টের লোকজন করেছেন এমনকি নিজের নাম্বারটি ভুল করে দেয়ার কারণেই হয়তো এমন হয়েছে। এসব কারণে পৌরসভাসহ উপজেলার আট ইউনিয়নের প্রায় দুইশতাধিক বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও স্বামী পরিত্যক্তা সুবিধাভোগীদের ৬ মাসের ভাতার টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে গেছে।
সমাজ সেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, পৌরসভাসহ উপজেলার আট ইউনিয়নে মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৯৮৯ জন। নগদ অ্যাকাউন্ট খোলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকার চলতি বছরে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা ব্যাংকের পরিবর্তে নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দিচ্ছেন।
চুক্তি অনুযায়ী নগদ কোম্পানি এন্ট্রিকৃত মোবাইল নাম্বারে ভাতাভোগীদের টাকা পাঠায়। কিন্তু নগদ কোম্পানির এজেন্টের লোকজনের উদাসীনতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ওয়েবসাইটে ভাতাভোগীদের মোবাইল নাম্বার ভুল এন্ট্রি দেন। ফলে উপজেলার প্রায় দুইশতাধিক ভাতাভোগীর অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের ভাতার টাকা চলে গেছে অন্যের মোবাইল নাম্বারে। তবে যে সকল মোবাইল নাম্বারে টাকা গেছে সে সব নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী বাঘমারা গ্রামের শরিফা আক্তারের মা বলেন, আমার মেয়ে ভাতা পাওয়ার জন্য গ্রামীণ নাম্বার দেয়,অফিসে এসে দেখি আমার মেয়ের ভাতা গেছে বাংলালিংক নাম্বারে, তাও আবার বন্ধ। দক্ষিণ বালালী গ্রামের প্রতিবন্ধী সেকুল মিয়ার ভাই হানিফ মিয়া জানান, আমার ভাইসহ আরও দুই বাচ্চা প্রতিবন্ধী। তাদের টাকাও চলে গেছে আরেক জনের মোবাইলে। ফোন করলে বন্ধ পাই। কিভাবে এর সমাধান হবে তাও জানি না।
কাইটাইল ইউপি চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ রয়েল জানান, এ কাজটি করেছে মূলত একটি চক্র। আমার ইউপি সচিবকে সমাজসেবা অফিসে পাঠিয়েছিলাম। অনেকের টাকা অন্যের মোবাইলে চলে গেছে। বিষয়টি সমাধান করার জন্য সমাজসেবা অফিসকে অবগত করা হয়েছে।
ভাতা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহজামান আহমেদ বলেন, নগদের অফিসের লোকজন এমনটি করেছে। যে ভুল নাম্বারগুলোতে টাকা গেছে কিন্তু বন্ধ রয়েছে ওই নাম্বারগুলো পেরোল দেয়া হয়েছে। সেই টাকা ফেরত আসবে, দিতে পারব। আর যে নাম্বারের টাকা উত্তোলন করেছে, সেটার কিছু করতে পারব না। প্রথম পর্যায়ে অনেক জটিলতা থাকবে। সারা দিন কাজ করছি। ভুলে যাদের টাকা চলে গেছে তাদের বিষয়টি নগদের অফিসে ও আমাদের নেত্রকোনা অফিসে প্রেরণ করেছি। দেখা যাক কি করা যায়।
মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ জানান, টাকা না পাওয়া কয়েকজন ভাতাভোগী আমার অফিসে এসেছিল। তাদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি সমাধানে জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে কথা বলব এবং নগদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।