হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি,
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের মাতৈন পাটওয়ারী বাড়ির উঠানে মরদেহ পড়ে আছে ছেলে মোস্তফা কামাল পাটওয়ারীর (৫৫)। কিন্তু মরদেহ দাফনে এগিয়ে আসছেন না,বাবা আব্দুল কাদের পাটওয়ারীসহ পরিবারের অন্যান্য লোকজন। তিনিসহ তার পরিবারের লোকজন বসতঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে আছেন। মৃত মোস্তফা কামাল পাটওয়ারী তার সন্তান নয়, তাই কবরস্থানে দাফন করতে দিবেন না তিনি। এখবর রাতে বের হওয়ার সাথে সাথে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যম রাতেই ঐ বাড়ীতে হাজির হয়।
এমন ঘটনা ঘটেছে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের মাতৈন গ্রামের পাটওয়ারী বাড়িতে। সোমবার বিকালের দিকে মোস্তফা কামাল পাটওয়ারী (৫৫) ভাড়া বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। তার স্ত্রীসহ ১৭ ও ১২ বছর বয়সি ২টি পুত্র সন্তান রয়েছে।
স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বিউটি জানিয়েছেন প্রায় ২৩ বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু তিনি কালো হওয়ায় তার শ্বশুর-শাশুড়ী সব সময় তাকে নির্যাতন করতেন। বিশেষ করে শাশুড়ী ও ননদদের অত্যাচারে তিনি অতিষ্ঠ ছিলেন। এ বিষয়ে স্বামীকে জানালে তিনি (মোস্তফা কামাল পাটওয়ারী) ধৈর্য্য ধরার কথা বলতেন।
আমার ন্যায্য হিস্যা না পাওয়া পর্যন্ত স্বামীর মরদেহ দাফনে আপত্তি । তিনি বলেন, ২০০০ সালের দিকে আমার বাবার বাড়ির লোকজনের টাকা-পয়সা খরচ করে আমার স্বামীকে বিদেশ পাঠাই। তিনি বিদেশ যাওয়ার পর সব টাকা আমার শ্বশুরের নামে পাঠাতেন। সেই টাকা দিয়ে শ্বশুরসহ আমার সংসার খরচ চলতো এবং আমার স্বামীর টাকা দিয়ে অনেক সম্পদ শ্বশুরের নামে কেনা হয়েছে। তবুও আমি শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদদের মন জয় করতে পারেনি।
এক পর্যায়ে আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে দেশে চলে আসেন। কিন্তু দেশে আসার পর আমার শ্বশুর ও ননদরা আমার স্বামীর চিকিৎসা না করিয়ে আমাদের ঘর থেকে বের করে দেয়। আমি আমার বাবার বাড়ির সহযোগিতায় তাকে চিকিৎসা করাই। এরপর তিনি গুরুতর অসুস্থ হলে আমি মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এমপি স্যারকে জানাই এবং পরবর্তীতে স্যারের সহযোগিতায় আমার স্বামীকে ঢাকায় চিকিৎসা করায়।
এর মধ্যে তারা (শ্বশুর ও ননদেরা) এক টাকাও দেয়নি। অথচ আমার স্বামীর টাকা দিয়ে সম্পদ কিনছে, বাড়ি-ঘর করছে। জীবিকা নির্বাহ করেছে। আজ (সোমবার) চিকিৎসারত অবস্থায় আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করলে লাশ দাফন করার জন্য বাড়িতে আনি। কিন্তু আমার শ^শুর কবরস্থানে লাশ দাফন করতে দিবে না বলে বাঁধা দেয়। তিনি জানান, আমার স্বামী তার সন্তান নয়।
আমার স্বামী জীবিত থাকতে আমার দুই ছেলে ও আমাকে বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। এখন আবার স্বামীর লাশ দাফন করতে দিচ্ছেন না আমার শ্বশুর। তাহলে আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ কি, তারা কোথায় থাকবে? তাই ন্যায্য হিস্যা ছাড়া আমিও আমার স্বামীর লাশ দাফন করতে দিবো না। কারণ, আমার সন্তানদের কি উপায় হবে?
এদিকে সংবাদকর্মীরা পাটওয়ারী বাড়িতে ঘণ্টাখানেক সময় অবস্থান করেও নিহতের বাবা আব্দুল কাদের পাটওয়ারী ও তার বোনদের বক্তব্য নিতে পারেনি। আব্দুল কাদের পাটওয়ারী পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে পাকা বসতঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতরেই অবস্থান করছিলেন। সংবাদকর্মীরা ও এলাকার লোকজন ডাকাডাকি করলেও কেউই ঘরের দরজা খোলেননি।
তবে নিহতের ভাই স্বপন জানিয়েছেন, কামালের প্রসঙ্গে আমি কিছুই বলতে পারবো না। এসময় পাটওয়ারী বাড়ির নুরুল আলম পাটওয়ারীসহ বাড়ির অন্যান্য ও এলাকার লোকজন মৃত মোস্তফা কামাল পাটওয়ারীর বাবা আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। তারা জানান, তিনি (আব্দুল কাদের) খুবই ধূর্ত প্রকৃতির লোক। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুল কাদেরের ঘরে হামলার করার চেষ্টা করে। পরে বাড়ির লোকজনের সহযোগিতায় উত্তেজিত গ্রামবাসীকে বাঁধা প্রদান করা হয়। এসময় তারা নিহত মোস্তফা কামাল পাটওয়ারীর মরদেহ তার বাবার বসতঘরের দরজার সামনে নিয়ে রাখে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন জানিয়েছেন প্রশাসনের সহযোতিগায় নিহতের স্ত্রী ও সন্তানের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের থাকার জন্য কামালের ক্রয়কৃত সোয়া ৯ শতাংশ জমি স্ত্রী বা তার ছেলেদের নামে দেয়া হবে। এই মর্মে রাতেই একটি স্ট্যাম্প করা হয়। মৃত কামালের বাবা আবদুল কাদেরকে কামালের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে এ জমি দিতে রাজি হয়েছে। এর পরই রাত ১২ টায় কামাল পাটওয়ারীর লাশ দাফন করা হয়।