স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থাকবে তবে ভাগ থাকবে না সম্পদে। ধারণ করা যাবে না সন্তান, থাকবে তালাকের অধিকার। এমন পাঁচ কঠিন শর্তের বেড়াজালে আটকে গিয়েছিল মামুনুল হকের কথিত দুই স্ত্রী ঝর্ণা আর জান্নাতুলের জীবন। চুক্তিভিত্তিক এসব বিয়েকে অদ্ভুত আখ্যার পাশাপাশি দেশের প্রচলিত আইনেরও পরিপন্থী বলে দাবি পুলিশের।
২০১৮ সালে বিয়ে বিচ্ছেদের পর জান্নাত আরা ঝর্ণাকে ফুঁসলিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসেন মামুনল হক। প্রথমে পরিচিতদের পরে ভাড়া বাসায় রাখা হয় তাকে। মামুনুলের ভাষ্য, মানবিক দিক বিবেচনায় ঝর্ণাকে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করেন।
একই ঘটনা ঘটে কথিত তৃতীয় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গেও। বেশকিছু কঠিন শর্ত দিয়ে তাকেও বিয়ে করার কথা স্বীকার করেছেন পুলিশের কাছে। মামুনুল হকের চুক্তিভিত্তিক দুই বিয়ের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
কথিত দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীকে বিয়ের জন্য যেসব শর্তারোপ করা হয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে, ওই নারীরা স্ত্রী হিসেবে থাকবেন, তবে মর্যাদা পাবেন না। স্বামী- স্ত্রীর সর্ম্পক থাকবে তবে ভাগ পাবেন না সম্পদের। সন্তান ধারণ করা যাবে না, প্রত্যাশা করা যাবে না স্থায়ী দাম্পত্য জীবনের। কারও কাছে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না, থাকবে তালাকের অধিকার।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, মেলামেশা করতে পারবে, তবে স্ত্রীর মর্যাদা পাবে না। সম্পদের অধিকার সে পাবে না। একই সঙ্গে সন্তান ধারণ করতে পারবে না। এ ধরনের বেশ কিছু শর্ত চুক্তির মধ্যে আছে। চুক্তিগুলো অদ্ভুত। এগুলো বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থী
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাবিননামা একটি আইনি দলিল। মুসলিম আইনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রসঙ্গত, হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ জান্নাত আরা ঝর্ণা মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর বসিলার একটি বাসা থেকে ঝর্ণাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ঝর্ণাকে দেওয়া হয় তার বাবার জিম্মায়। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ঝর্ণা।
৩ এপ্রিল হেফাজত নেতা মামুনুল হক নারীসহ নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টে ধরা পড়েন। তখন তিনি ওই নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। পরে প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বার সঙ্গে একটি ফোনালাপ ফাঁস হয় তার। যেখানে মামুনুল বলেন, জনরোষ থেকে বাঁচতেই জান্নাত আরা ঝর্ণাকে দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। আসলে ওই ঝর্ণা হাফেজ শহীদুলের স্ত্রী।
১৮ এপ্রিল মামুনুল গ্রেফতার হলে জিজ্ঞাসাবাদে রিসোর্টকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। পরের দুই নারীর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক করেন মামুনুল।
হেফাজত নেতা মামুনুল হক বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় পুলিশের রিমান্ডে রয়েছেন। পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছাড়াও তার ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকা লেনদেনের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ।