জীবিকার তাগিদে গত ৯ ডিসেম্বর সমুদ্রে নাও ভাসান ১৮ জেলে। কিন্তু নৌকার ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে দীর্ঘ ২২ দিন তারা সমুদ্রে ভাসতে থাকেন। খাবার-পানি শেষ, জ্বালানিও নেই, নিস্তেজ হয়ে পড়ে শরীর। এমন অবস্থায় সেখানে হাজির হয় নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ। অবসান হয় দীর্ঘ উৎকণ্ঠার। এখন তারা বাড়ি ফিরেছেন, পরিবারের কাছে।
‘ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ আমাদের নৌকার মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকেই আমরা সাগরে ভাসতে থাকি।’ বলছিলেন নৌকায় থাকা জেলে হাবিবুল্লাহ।
তিনি জানান, যে বাজার (খাবার এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী) তারা সঙ্গে নিয়েছিলেন তাতে টেনেটুনে ১০ দিন চলেছে।
কুয়াকাটা আলিপুর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা জানান, পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্য বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রলার ‘এফবি আল হাসান’ এর সঙ্গে কয়েকদিন পর্যন্ত সাগরে অন্য জেলেদের দেখা হয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার পর বাতাসে ভেসে ট্রলারটি মাঝ সমুদ্রে চলে যায়। যেখানে নোঙর করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে তারা সমুদ্রে ভাসছিল। কয়েকদিনের মধ্যে তাদের খাবার, পানি, জ্বালানি শেষ হয়ে যায়।
মূলত খাবার শেষ হওয়ার পর থেকেই এই জেলে দলের মূল সংগ্রাম শুরু হয়।
হাবিুল্লাহ বলেন, খাবার শেষ হওয়ার পর আমরা মাছ শুকিয়ে খেয়েছি। মাছ ফালি করে রোদে শুকিয়ে খেয়েছি পুড়িয়ে খেয়েছি কয়েকদিন। এক সময় ডিজেলও শেষ হয়ে যায়।
জলের ভেতরে আটকা পড়া নৌকায় খাবার পানির সংকট দেখা দেয়। হাবিবুল্লাহ বলেন, সাগরের পানিতো নোনা। ওটা তোর আর খাওয়া যায় না। আমরা মাছ রাখার জন্য যে বরফ নিয়েছিলাম সেই বরফ গলা পানি খেয়েছি।
৩০ ডিসেম্বর ট্রলারটি নিখোঁজ হওয়ার খবর জানতে পারেন আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, আমি নিখোঁজের সংবাদ জানতে পেরে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী এবং থানা পুলিশে জানাই।
শনিবার (৯ জানুয়ারি) আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সেন্টমার্টিন থেকে ৮৩ নটিক্যাল মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়। নৌবাহিনীর জাহাজ নির্মূল ও অতন্দ্র গভীর সাগরে ভাসমান অবস্থায় জেলেসহ ট্রলারটি উদ্ধার করে। তীব্র পানি ও খাদ্য সংকটে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল অবস্থায় জেলেদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাদ্য বস্তু দেয়। পরে তাদের পটুয়াখালী পাঠানোর জন্য সেন্টমার্টিনে হস্তান্তর করে।
শনিবার রাতে কোস্ট গার্ড সেন্টমার্টিন স্টেশনের কর্মকর্তা লে. কমান্ডার আসিফ মোহাম্মদ আলী জানান, উদ্ধার করা জেলেদের নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
উদ্ধার জেলেরা হলেন- কাশেম কেরানী, বাবুল, আল আমিন, হোসেন, তোফাজ্জল, খলিল, শাকিল, আজিজ, নজরুল, শামীম সিকদার, আবুল কাশেম, কবির উদ্দিন, জগন্নাথ, ইউসুফ, রমজান, হাফিজ, শাহ আলম, বাবলু এবং হাবিবুল্লাহ।
এদের মধ্যে হাবিবুল্লাহর বাড়ি লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলার কীর্তন চর গ্রামে। শনিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কল দিলে রিসিভ করে তার এক ছেলে। অসুস্থ বাবার কাছে সে ফোন নিয়ে যায়। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল হাবিবুল্লাহ’র। পাশ থেকে ১২ ও ৮ বছর বয়সী দুই ছেলে বাবার অস্পষ্ট কথাগুলো স্পষ্ট করে বলছিল। অথচ দু’দিন আগেও হাবিবুল্লাহ জানতেন না আর কখনও ছেলেদের মুখ দেখতে পারবেন কিনা।