আমার কন্ঠ ডেস্ক- দুজন একই এলাকার পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দা। একই বিদ্যালয়ে একই শ্রেণিতে লেখাপড়া করতেন। সেই সুবাদে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা। অতঃপর পরিণয়। কিন্তু ১৬ বছরের দাম্পত্য জীবন ভেঙ্গে দিয়ে সম্প্রতি ওই চিকিৎসক এক নার্সকে বিয়ে করেছেন। আর প্রথম স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চুরির মামলা দেয়ার পর তিন সন্তানসহ স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। প্রভাবশালী ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করেও সুবিধা করতে পারেননি প্রথম স্ত্রী।
ভুক্তভোগী নারী উম্মে কুলছুম ফরিদগঞ্জ উপজেলার গল্লাক ইউনিয়নের আদশা গ্রামের মৃত আঃ রহমানের কন্যা। তার স্বামী আবুল কালাম আজাদ ওরফে একে আজাদ একই উপজেলার গুপ্টি ইউনিয়নের দত্রা গ্রামের মৃত আঃ মান্নান শেখের ছেলে। বর্তমানে এ কে আজাদ হাজীগঞ্জ বাজারস্থ শাহ মিরান হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পার্টনার ও গাইনী সার্জন।
জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ১০ জুলাই ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক দেড় লাখ টাকা দেনমোহরানায় দুজনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তাদের আরমান শেখ (১৪), আনিছা তাহমিন (১০) ও ফারহান শেখ (২) নামে তিনটি সন্তান রয়েছে।
উম্মে কুলছুমের ছোট ভাই রবিউল জানান, বিয়ের পর একে আজাদ লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার সোনাপুর এলাকায় আল-হেলাল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করেন। সেখানে তিনি কর্মরত এক চিকিৎসক ও নার্সের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
রবিউল আরও জানান, এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় আমার বোনকে অত্যাচার নির্যাতন করে বাসা থেকে সন্তানসহ বের করে দেন একে আজাদ। তিনি আমার বোনসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে ৮ লাখ টাকার মালামাল চুরির অভিযোগ এনে ১৩ জুলাই রামগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় রামগঞ্জ থানা পুলিশ আমাকে রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। বর্তমানে আমরা আদালত থেকে জামিনে আছি।
এদিকে কুলছুমকে নির্যাতন করে বের করে দেয়ার পর কুলছুম ২৮ জুলাই চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে একে আজাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯৯ (গ) ধারায় একটি মামলা করেছেন। ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করেন। পরে কুলছুম ১৫ অক্টোবর আদালতে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের উপর নারাজি আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন গ্রহণ করে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলাটি পুনঃ তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে।
কুলছুম জানান, ৩ সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তার সব অত্যাচার ও অপকর্ম সহ্য করেছি। আল-হেলাল ক্লিনিকে তিনি নিপা আক্তার নামে এক নার্সের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তার ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ফারহানার সাথেও অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো।
কুলছুম আরও জানান, নিপার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম জুলাই মাসে তাকে তালাক দেয়। এরপর থেকে একে আজাদ নিপাকে নিয়ে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ মেয়র ভিলায় একই ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ আমার কোনো সাক্ষ্য না নিয়ে আমাদের না জানিয়ে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। ইতিমধ্যে একে আজাদ দু বার ডাকযোগে তালাকনামা পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমরা তা গ্রহণ করিনি।
কুলছুমের দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল প্রসঙ্গে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হক বলেন, যথোপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ায় মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
একে আজাদ কুলছুমকে তালাকের কথা স্বীকার করে বলেন, এমন ডেসপারেট মহিলা নিয়ে সংসার করা যায় না। তিনি বলেন, এ দেশের নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো যেভাবে আলোচিত হয় আমরা পুরুষরা নির্যাতিত হলে কোথাও প্রতিকার চাইতে পারি না। যেহেতু বিষয়টি আমাদের পারিবারিক সেহেতু এ বিষয়ে সংবাদ না করাই ভালো।