কৃষি ও শিল্প বান্ধব ‘নিম্ন আয়ের পেশাজীবি, কৃষক ও প্রান্তিক/ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, ২০২০’ এ প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কীভাবে ঋণ সুবিধা পাবেন তার একটি পর্যালোচনা তুলে ধরেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট। এই পর্যালোচনাটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলশ্রতিতে দেশের নিম্নআয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের আয় উত্সারী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছেন না। অথচ গ্রামীণ অর্থনীতিতে এদের অবদান অনস্বীকার্য।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্টির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলমান রাখা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ ব্যংক কর্তৃক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে। এই স্কিমে তহবিলের পরিমান তিন হাজার কোটি টাকা। তবে প্রয়োজনের নিরিখে বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিলের পরিমাণ বাড়াতে পারবে।
এই স্কিমের মূল শক্তি বা উদ্ভাবন হলো এই ব্যবস্থাপনাটির মাধ্যমে গতানুগতিক রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং এনজিও কর্তৃক প্রদেয় ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাপনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থাপনায় মূলত স্থাবর /অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক/মর্টগেজ এর মাধ্যমে ঋণ গ্রহণের সুযোগ থাকে। অন্যদিকে এনজিও কর্তৃক প্রদেয় ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরাসরি কোন স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক না নিয়ে সমিতির উপর বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। সরকার ঘোষিত এই উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপনায় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বা প্রয়োজন বিবেচনায় আনা হয়েছে। কোন মর্টগেজ বা বন্ধকের প্রয়োজন নেই।
প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এই নীতিমালার আওতায় ঋণ পাবেন। এই নীতিমালার মাধ্যমে উপকারভোগীরা খুব সহজেই ঋণ পাবেন।
নিম্ন আয়ের পেশাজীবি, কৃষক ও প্রান্তিক /ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার উদ্যোক্তা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, অতি দরিদ্র ও অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য এতে বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। নারীবান্ধব নীতির কারণে নারীদের ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও বিশেষ সুব্যবস্থা রয়েছে।
যদিও একটি বিশেষ পরিস্থিতি অর্থাৎ কভিড-১৯ মোকাবেলায় এই ঋণ নীতিমালা প্রণয়ণ হয়েছে তারপরেও কভিড আক্রান্ত ব্যক্তি/ গোষ্ঠি ছাড়াও দেশের সব শ্রেণির জনগণ এ ঋণের আওতায় উপকৃত হবেন। কারণ প্রাপ্যতা অনুযায়ী দেশের জনসাধারণকে এই ঋণের আওতায় সুবিধা প্রাপ্ত হবার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে
এই বিনিয়োগটি অত্যন্ত নিরাপদ কেননা এক্ষেত্রে অর্থায়নকারী ব্যাংকের কাছে সরাসরিভাবে দায়বদ্ধ হবেন প্রতিষ্ঠান (আমানতগ্রহণকারী এনজিও), ব্যক্তি নয়।
অন্যদিকে একটি এনজিওর জন্যও বিষয়টি নিরাপদ কেননা এ ব্যবস্থাপনায় সামষ্টিক/দলগত দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হয়
এই স্কিমের আওতায় ঋণের যথেচ্ছ ব্যবহারের সুযোগ নেই কারন এই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে আমানত গ্রহণকারী এনজিওকে তাদের বিগত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দক্ষতা মূল্যায়নের ভিত্তিতে ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে।
ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে (একক গ্রাহক, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা) অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ঋণ গ্রহীতার পেশা, ব্যবসার ধরণ, টার্নওভার, ফসল উত্পাদনের পঞ্জিকা অনুযায়ী গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গতানুগতিক ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া থেকে স্বতন্ত্র এবং গ্রাহকবান্ধব হয়েছে।
এই স্কিমের আওতায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যে ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষী বা কোন প্রতিষ্ঠান লাভবান হবেন তা নয়, ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানও (বাংলাদেশ ব্যংক, ঋণ প্রদানকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক, ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান) লাভবান হবে। এক্ষেত্রে ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং ঋণ গ্রহীতা প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট লভ্যাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। ঋণ গ্রহণের কোন ক্ষেত্রে চার্জ বা ফিস দিতে হবে তা সুষ্পস্টভাবে বলা আছে।
ঋণের মেয়াদ চলাকালে ঋণগ্রহীতার কোন সমস্যার ক্ষেত্রে এই নীতিমালায় বীমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এর আগে ঋণ খেলাপীদের ঋণ গ্রহণের সুযোগ না রাখার কারণে ঋণ গ্রহীতার মান যোগ্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে
এই অর্থ ব্যবস্থাপনায় আশা করা যায় যে, নিম্ন আয়ের পেশাজীবি, কৃষক ও প্রান্তিক/ ক্ষদ্র ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। তবে এনজিওসমূহ ঋণ বিতরণ ও আদায়কালে যাতে অতিরিক্ত সুদ আরোপ না করে সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
আজ,
শুক্রবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১৬ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দরাত ১:৪৯
নোটিশ বোর্ড
সর্বশেষ
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।