শাহরাস্তিতে ড্রামে লাশ পাওয়া যুবকের হত্যাকারী আটকে পিবিআই’র সংবাদ সম্মেলন
১৮ অক্টোবর বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেছ এলাকার পিবিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সস্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাস
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১০ নভেম্বর শাহরাস্তি উপজেলার যে ড্রামের ভেতর যুবকের লাশ পাওয়ার ঘাতককে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। সম্পত্তিগত বিরোধের জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়েছিলো।
পিবিআই চাঁদপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার এর নেতৃত্বে পিবিআই হেডকোয়াটার্সের সহযোগিতায় ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মৃত সিদ্দিকুর রহমানের কললিস্ট পযার্লোচনা করে একটি মোবাইল নাম্বারকে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়। ওই মোবাইল নাম্বারের স‚ত্র ধরে তদন্ত কার্যক্রম অগ্রসর হতে থাকে। এক পযার্য়ে ওই নাম্বারের রেজিস্ট্রেশনকারীকে সনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় ঘাতকের ছোট ভাই ন‚রে আলম উক্ত সিমটি তার এক বন্ধুর নিকট হতে সুকৌশলে সংগ্রহ করে ঘাতক তার বড় ভাই সারওয়ার আলমকে দেয়। গত ১৬ নভেম্বর নুরে আলমকে গ্রেফতারের পর সে জানায় যে, ৫/৬ মাস আগে তার বড় ভাই সারওয়ার আলম তাকে একটি ফেইক (বেনামী) সিম সংগ্রহ করে দিতে বলে এবং এ জন্য তাকে ৫শ’ টাকা দেয়। নুরে আলম আরো জানায়, গত ৯ নভেম্বর রাত অনুমান ৮টার সময় তার বড় ভাই সারওয়ার আলম তাকে মোবাইলে পদুয়ার বাজার পেট্রোল পাম্পে যেতে বলে এবং সেখানে বড় ভাইয়ের একজন বন্ধু একটি মোটর সাইকেল নিয়ে আসবে। মোটর সাইকেলটি মামার বাড়িতে রেখে আসার জন্য বলে। বড়ভাই সারওয়ারের কথা মতো সে মোটর সাইকেলটি বড় ভাইয়ের বন্ধুসহ মামার বাড়িতে রেখে আসে। নুরে আলমের দেখানো মতে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে দেখা যায় যে, উক্ত মোটর সাইকেলটিই মৃত সিদ্দিকুর রহমানের। পরবর্তীতে সারওয়ার আলমকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায়, মৃত সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ির পিছনের দিকে আসামী সারওয়ার আলমদের বাড়ি। মৃত সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ির উপর দিয়ে কোনরকমে ঘাতক সারওয়ার আলমদের আসা-যাওয়া করতে হয়। আসামী সারওয়ার আলম সিদ্দিকুর রহমানের নিকট আসা-যাওয়ার পথের জন্য ১০ফুট রাস্তা দাবি করে। এজন্য কয়েকবার সালিশ বৈঠকও হয়। কিন্ত মৃত সিদ্দিকুর রহমান রাস্তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অনুমান ৪ বছর আগে স্থানীয় এক সালিশ বৈঠকে আসামী নুরে আলম, সারওয়ার আলম এবং তার আপন চাচাকে মৃত সিদ্দিকুর রহমানের প্ররোচনায় সালিশদারগণ তাদের নাকে খড় দেয়ায়। এতে তারা চরম অপমান বোধ করে। সেই থেকে আসামী সারওয়ার আলম মৃত সিদ্দিকুর রহমানের উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা মতে সে, সিম সংগ্রহ করে এবং বাসা ভাড়া নেয় চৌদ্দগ্রাম শহরে। গত ৯ নভেম্বর প‚র্বপরিকল্পিতভাবে উক্ত সিম হতে মৃত সিদ্দিকুর রহমানকে বিদ্যুতের বড় কাজ করার জন্য ডেকে আনা হয়। সন্ধ্যার সময় মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বাসায় ইলেকট্টিকের কাজ করাবে বলে সিদ্দিকুর রহমানকে ফোন করে বলে আমানিয়া হোটেলের সামনে থাকতে। সেখান হতে তার লোক গিয়ে বাসায় নিয়ে আসবে। সিদ্দিকুর রহমানকে আসামী সারওয়ার আলমের সহযোগী পরিকল্পনা মতো তার বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় আসার সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে তার হাত পা বেধে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হয় এবং রাতের এক পর্যায়ে ছোরা দিয়ে হত্যা করা হয়।
পরের দিন ১০ নভেম্বর সিদ্দিকুর রহমানের লাশ ড্রামের ভিতরে ঢুকিয়ে একটি পিকআপ ভেনে করে উল্লেখিত স্থানে ফেলে পালিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, যে পিকআপে ড্রামটি আনা হয়েছিল ওই পিকআপটির সন্ধানে এখনো কাজ করছি। তাছাড়া খুনী সরোয়ার আলমের ছোট ভাই নূরে আলম জিজ্ঞাসাবাদে সীমের বিষয়ে সত্যতা শিকার করেছে। তাছাড়া ১৬৪ ধারায় সেও জবানবন্দি দিয়েছে। নিহত ছিদ্দিকুর রহমানের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ছিদ্দিকুর রহমান ৯ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে কুমিল্লা দক্ষিন থানায় একটি নিখোঁজের ডায়রী করা হয়। সিদ্দিকের খুনে ব্যবহৃত আলামত আমরা আসামী সারওয়ার আলমের দেখানো মতে তার ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করেছি। বাসার ভিতরে প্রবেশ করে হত্যা কাজে ব্যবহৃত ২টি ছোরা, ২টি ক্ষুর, ২টি ক্রিকেট স্ট্যাম্প, আসামী সারওয়ার আলমের রক্ত মাখা ১টি জিন্সের প্যান্ট, ১টি গেঞ্জিসহ কাপড়-চোপর ও মৃত সিদ্দিকুর রহমানের জুতা এবং রক্ত মাখা কাপড়চোপর এবং মোটর সাইকেলের চাবিসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছি।