মোঃ কামাল হোসেন ॥
টাকা আয়ের মেশিন হাসপাতাল ও ডায়গনিস্টিক সেন্টার। রাতারাতি কোটিপতি হতে চাইলে কোন রকমে একটি হাসপাতাল দিলে হয়। শুধু মাত্র প্রভাবশালি কিছু লোককে হাতে রাখইে চলবে। আইন কানুন মানার দরকার নেই। তেমন ঘটনাই ঘটছে। আর যদি লোভনীয় অপার দিয়ে টাকা ওয়ালা কাউকে রাখা যায় তা হলে তো কথাই নেই…!
নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে হাজীগঞ্জে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়গনিস্টিক সেন্টার। মাত্র ক’বছরের মধ্যে এসব হাসপাতাল চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। ১৫ বছর আগেও হাজীগঞ্জে হাতে গনা ২/৩টি হাসপাতাল থাকলে বর্তমানে এ উপজেলায় ১০/১২টি প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে ২/৩ টি ছাড়া বাকীগুলোর সরকারের কোন অনুমোতি নেই। শুধু মাত্র সিভিল সার্জনের কাছে হাসপাতাল ও ডায়গনিস্টিক সেন্টারের জন্যে আবেদন করা হয়েছে। আবেদন করেই শুরু করে হাসপাতাল ও ডায়গনিস্টিক কার্যক্রম। হাসপাতাল ও ডায়গনিস্টিক স্টোর করতে হলে সরকারের যে ধরণের নিয়ম কানুন রয়েছে তা মানা হয়না। ভবন ভাড়া নিয়ে বিশাল সাইনবোর্ড লাইগিয়ে ২০/৩০ জন নাম মাত্র পাসকরা ডাক্তারকে বিষেশজ্ঞ ডাক্তার বলে নাম ব্যবহার করে গ্রামের কোয়াক (ভূয়া)ডাক্তারদের মাধ্যমে রোগী আনার ব্যবস্থা শুরু করে। গ্রামের রোগীরা আসলে তাদেরকে বুঝানো হয় এ হাসপাতালে অনেক বিজ্ঞ ডাক্তার আসে। আপনারা আতœীয় স্বজনদেরকে এ হাসপাতালে নিয়ে আসবেন। আপনাদেরকে কমিশন দেয়া হবে বা টাকা কম রাখা হবে। এই বলে শুরু হয় অর্থ আয়ের কৌশল। পাশাপাশি অনেক হাসপাতালে দুর দরন্ত থেকে ৮ম শ্রেনী পাস বিভিন্ন ব্যক্তিকে ডাক্তার বানিয়ে রোগীদের কে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ নিয়ে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করলেও প্রশাসনের প থেকে কোন পদ না নেয়ার কারণে হাসপাতাল মালিকরা আরো বেপোরোয়া হয়ে উঠে। গরীবের কস্টোর টাকা সহজে পকেটে নেয়ার মেশিন বলে মনে করেন হাসপতাল মালিকরা। গত কয়েক বছরে অন্তত ১৫/২০ জন রোগীকে চিকিৎসার নামে খুন বা হত্যা করা হয়েছে। তিগ্রস্ত পরিবাররা বাড়া বাড়ি করতে চাইলে হাসপতাল মালিকরা রাজনৈতিক মোড়লদের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আর মোড়লরা ঐ তিগ্রস্ত পরিবার কে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে বা চাপ প্রয়োগ করে নাম মাত্র কিছু টাকা দিয়ে সমাধারন করে দেয় এবং বলে দেয়া এ নিয়ে কোন সাংবাদিক বা কাহারো কাছে কিছু বলবেন না। নিরুপায় হয়ে তিগ্রস্তরা চলে যায়। অবশেষে গত কয়েকদিনে হাজীগঞ্জে সেন্টাল হাসপতাল ও ইসলামিয়া মডার্ণ হাসপতাল থেকে দুজন ৮ম শ্রেনী পাশ বিশেষজ্ঞ! ডাক্তারকে আটক করা হয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে নড়ে ছড়ে বসে হাসপাতাল ও ডায়গনিস্টির সেন্টার মালিকরা। এর পর থেকেই হাজীগঞ্জের হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তার সংখ্যা কমতে থাকে।
টাকা আয়ের মেশিন হাসপাতাল ও ডায়গনিস্টিক সেন্টারঃ নাম মাত্র হাসপাতাল দিয়ে দালালদের মাধ্যমে হাসপাতালে রোগী সংগ্রহ করে প্রথমে ডাক্তার দেখিয়ে কম পে ৫/১০ রকমের টেস্ট দেয়া হয় রোগীকে। টেস্ট করানো পর বিল করা হয় নিজের মনমতো। রোগীরা টেস্টের টাকা কেউ দিতে পারে কেউ না পারলে ব্যবস্থা করে দেয়। পরে ডাক্তার ভিজিট ৫শত থেকে ৭শত টাকা দিতে হয়। সব মিলিয়ে রোগী যে পরিমান টাকা চিকিৎসার জন্যে নিয়ে আসে তা পুরোটাই দিতে হয় হাপাতালকে। কিন্তু পরে রোগীরা ওষুধ কেনার জন্য যে পরিমান টাকা দরকার তা আর হাতে থাকে না। যার জন্যে রোগীরা ওষুধ না কিনে বাড়ী ফিরে যায় মনে কষ্ট নিয়ে। এ ভাবে রাতা রাতি ধনীর কাতারে নাম চলে যায় হাসপাতাল মালিকদের। কেউ বাড়া বাড়ী করলে তাকে হুমকি দেয়া হয় এবং আমি উম্মক নেতার আতœীয়। আর এভাবে চিকিৎসার নামে গরীবের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হাসপাতাল ও ডায়গনিষ্টিক সেন্টার মালিকরা।
অনেক হাসপাতালের লাইসেন্স না থাকলেও চলছে ঘুষ দিয়েঃ চাঁদপুর সিভিল সার্জন সূত্রে জানাযায় হাজীগঞ্জের কয়েকটি হাসপাতল শর্তসাপে অনুমোতি নিয়েছে হাপাতালের জন্যে। তার মধ্যে সরকারের নিয়ম মোতাবেক সকল যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা, টেকনেশিয়ান দ্বারা পরীা নিরিা, পর্যাপ্ত আলো বাতাস, পযাপ্ত নার্সসহ সকল কিছু থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তার ২০ ভাগও নেই হাসপাতাল গুলোতে। প্রশাসনের কেউ পরিদর্শনে আসলে টাকা দিয়ে তাদেরকে ম্যানেজ করার অভিযোগও রয়েছে। আবার কোন কোন হাসপাতাল ও ডায়গনিস্টিক মালিক আবেদন করেছেন হাসপাতাল বা ডায়গনিস্টিক সেন্টারের জন্যে। আবেদন করেই শুরু করেছেন হাসপাতাল ও ডায়গনিস্টিক সেন্টার। কিন্তু তা কোন নিয়মের মধ্যে নেই। এর জন্যে প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা না থাকার কারণে হাসপাতাল মালিকরা এ অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ঘুষ দিয়ে।
সাইনবোর্ডে ডাক্তারের নামের অভাব নেই কিন্তু বাস্তবে ভূয়াঃ হাসপাতালের সামনে দৃশ্যমান সাইনবোর্ডে বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ, প্রশিন প্রাপ্তসহ নানা ডিগ্রী ব্যবহার করে বিশাল ১০/১৫ জনের নাম ব্যবহার করে। বাস্তবে হাসপাতালের ভিতরে গেলে দেখা যায় মাত্র ৩/৪জন ডাক্তার আছেন। তাও কোন রকম পাস করা। রোগীদেরকে বলা হয় ঐ ডাক্তার বিশেষজ্ঞ, সেই ডাক্তার অভিজ্ঞ। এ ধরণের প্রতারনা করে রোগীদেরকে চিকিৎসা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ।
ভূল চিকিৎসায় রোগী মারা গেলে নামদারি মোড়লদের হস্তপেঃ হাজীগঞ্জের প্রাইভেট হাসপতালগুলোতে ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়া নিয়মিত ঘটনা। আর এ ঘটনা যেনো হাসপতাল মালিকদের জন্যে মামুলিক ব্যাপার। কারণ ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেলে টাকার কেনা মোড়লরা হুমকি ধমকি দিয়ে সমাধান করে দেয়। যার জন্যে হাসপাতাল মালিকরা রোগী মরার গেলে কোন চিন্তা করতে হয় না। রোগী মারা যাওয়ার খবর সাংবাদিকরা প্রকাশ করলে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়া হয়। মামলা দিয়ে জেলে পাঠাবে। আসলে সাংবাদিকদের কোন কিছু করার মতা নেই। কিন্তু হুমকির জন্যে সেরা মোড়লরা।
গর্ভবতি রোগীকে হাসপাতালে আসলেই সিজানিয়ানঃ গর্ভবতি রোগী আসলে হাসপাতাল মালিকদের খুশির সিমা থাকে না। কারণ ভর্ববতি রোগীকে প্রথমে বলেন বাচ্চার পজিশন বুঝতে হলে টেস্ট করাতে হবে। সে কথা মতো কয়েক ধরণে টেস্ট করিয়ে ৪/৫ হাজার টাকা বিল করা হয়। রিপোট আসলে রোগীকে বলে বাচ্চা বড় হয়ে গেছে বা বাচ্চার অবস্থা ভালো না। এ বলেন রোগীকে দুর্বল করে সিজারিয়ান করার জন্যে বাধ্য করা হয়। কোন উপায় না পেয়ে রোগীরা সিজারিয়ান করার অনুমোতি দিলে কন্টাক করা হয় ১৫/২০ হাজার টাকা লাগবে। রোগীরা গড়িমশি করলে ২/৩ হাজার টাকা কমিয়ে দিবে বলে সিজারিয়ান করার ব্যবস্থা করা হয়। এর পরেই কোন রকম পাস করা ডাক্তার দিয়ে সিজারিয়ান করা হয়। আর এ সিজারিয়ান এর কারণে কম পে ৩০ ভাগ রোগীদেকে জীবন দিতে হয় অথবা বাচ্চাতে জীবন দিতে হয়। সিজারিয়ান ৮০ ভাগ রোগীর ভবিসৎ মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে অনঅভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে সিজারিয়ান করার কারণে।
সিজারিয়ান করা হয় অনঅভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়েঃ গর্ভবতি মহিলাদের সিজারিয়ান করানোর জন্য হাজীগঞ্জে হাতে গনা ২/৩জন অভিজ্ঞ ডাক্তার রয়েছে। কিন্তু তারা নিয়মিত সময় দেয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু হাসপাতাল মালিকরা সিজারিয়ান করানো জন্যে ভাড়াটিয়া ডাক্তার খোঁজে না পেলে কোন রকম পাস করা ডাক্তার দিয়ে শুরু করে সিজারিয়ান। এতে করে অতিরিক্ত রক্তরনের মতো ঘটনা ঘটে। তখন রোগীর নিটকজনকে বলা হয় রোগীর ররে প্রয়োজন। তাড়াহুড়া করে রক্ত খোঁজা খুজি শুরু করা হয়। যারা রক্ত পায় তাদের রোগীর জীবন বাচলেও যারা রক্ত পায় না তাদের রোগীকে জরুরী ভিত্তিতে কুমিল্লা অথবা ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। এতে করে রোগীদের যেমন মৃত্যু ঝকি তেমনি অর্থের অপচয় বেশি। কিন্তু করার বা দেখার কেউ নেই।
কোন রকম পাসকরা ডাক্তার বড় রোগের চিকিৎসকঃ হাজীগঞ্জের হাসপাতালগুলোতে কোন রকম পাস ডাক্তারের সংখ্যা ৯৭ ভাগ। আর এ কোন রকম পাস করা ডাক্তাররাই ক্যানসার বা গুরুত্বপূর্ণ রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। রোগীদেরকে বুঝানো হয় এসব রোগের জন্যে এসব ডাক্তাররাই অভিজ্ঞ। কিন্তু যখন কয়েক মাস গেলে রোগীর রোগ ভালো হয় না বা চিকিৎসার উন্নতি হয় না তখন রোগীরা কুমিল্লা বা ঢাকায় গেলে অভিজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন এ রোগের জন্যে ঐ সব ডাক্তার সঠিক না বা তারা সঠিক চিকিৎসা না দিতে পারার কারণে আপনার রোগীর অবস্থা ভালো না। তখন রোগীর আতœীয়রা বুঝতে পারেন হাজীগঞ্জের ডাক্তাররা যে কিচিৎসা দিয়েছে তা সঠিক চিকিৎসা ছিল না।
টেকনেশিয়ান এর পরিবর্তে টেস্ট করাচ্ছেন বয়-আয়াঃ সরকারের নিয়ম প্রতিটি হাসপতালে অভিজ্ঞ টেকনেশিয়ান থাকতে হবে। কারণ প্রতিটি রোগীর টেস্টের রিপোটের উপর ভিত্তি করে রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু হাজীগঞ্জের হাসপতালগুলোতে ৯৫ভাগই টেস্ট করান বয়-আয়া দিয়ে। যার কারণে সঠিক রোগ নির্ণয় করানো হয় না। যতটুকু বুঝে তার মধ্যে থেকেই চিকিৎসা দেয়া হয়। যার কারণে রোগীরা সঠিক রোগ নির্ণয় থেকে বঞ্চিত হয়। যাদের টাকা আছে তারা কুমিল্লা বা ঢাকা গিয়ে টেস্ট করলে হাজীগঞ্জের সাথে অমিল হয়ে যায়। তখন রোগীরা হতাশ হয়ে পড়েন। বিশেষ করে ৮০ র্গোীদের দুরে গিয়ে আবার টেস্ট করানো সম্ভব হয় না। এতে করে ধুকে ধুকে মরতে হয়।
নোংরা পরিবেশে রোগীদেরকে বসে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টাঃ হাজীগঞ্জের অধিকাংশ হাসপতালে নোংরা পরিবেশ। রোগীতো দুরের কথা ভালো মানুষও বেশিন বসে থাকা কঠিন। রোগীরা অভিযোগ দিলেও হাসপতাল মালিকরা কন্নপাত করেন না। নিরুপায় হয়ে রোগী এবং রোগীর সাথে থাকা মানুষগুলো বসে থাকে।
রোগীদের কাছ থেকে ওষুদের দাম রাখা হয় তিনগুন বেশিঃ হাসপতালে রোগী ভর্তি হলে ওষুদের প্রয়োজন। আর হাসপতাল মালিকরা রোগীদেরকে চাপ দিয়ে থাকেন তাদের নিজস্ব ফার্মেসি থেকে ওষুদ দেয়ার জন্য। কিন্তু এ সুযোগে হাসপতাল মালিকরা রোগীদের কাছ থেকে প্রতিটি ওষুদের দাম বাজার মুল্যে থেকে তিন থেকে চারগুলে বেশি দাম নিয়ে থাকেন। এ নিয়ে হাসপতাল মালিক ও রোগীদের মধ্যে অনেক সময় ঝড়গা গয়ে থাকে বা রোগীরা বাজার থেকে ওষুধ কিললে দেখে ওষুদের দাম হাসপাতাল থেকে অনেক কম।
সব মিলিয়ে হাজীগঞ্জের প্রাইভেট হাসপাতাল মালিকরা গরীবের অর্থ নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ব্যবপারে প্রশসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে রোগীরা অনুরোধ করেন।