জঙ্গি তৎপরতার উপর বিশেষ সতর্কতা ও নজরদারির তাগিদ
বেশ কিছুদিন নীরব থাকার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি তৎপরতায় প্রশাসন ও সচেতন মহল নড়েচড়ে বসেছে। জনগণের মাঝে সতর্কতা ও সচেতনতা পুনঃ সৃষ্টিতে প্রশাসন মাঠে নেমেছে। বাসা বাড়িসহ সর্বত্র প্রতিবেশীর খোঁজ খবর রাখা, আগন্তুক কাউকে দেখলে তার খোঁজ নেয়া এসব ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক থাকার জন্যে জনগণকে বলা হচ্ছে। চাঁদপুরের পুলিশ প্রশাসনও জনগণকে সচেতন করার জন্যে মাঠে নেমেছে। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার স্বয়ং জনপ্রতিনিধিসহ বিশিষ্টজনদের সাথে বৈঠক করছেন। তারই অংশ হিসেবে তিনি বুধবার চাঁদপুর পৌরসভায় গিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাথে জরুরি বৈঠক করেন।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম গতকাল বুধবার দুপুরে চাঁদপুর পৌরসভায় যান। তিনি মেয়রের কার্যালয়ে মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ও সকল কাউন্সিলরের সাথে জরুরি বৈঠক করেন। এ বৈঠকটি ছিলো সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ জঙ্গি হামলা ও জঙ্গিদের তৎপরতার ব্যাপারে। পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার সকল কাউন্সিলরের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের অবস্থানের আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, তারা আমাদের আশেপাশেই অবস্থান করছে। এেেত্র তারা নানা কৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এমনকি এখন সবচেয়ে বড় ভয়ানক বিষয় হচ্ছে তারা যেখানে তাদের আস্তানা গড়ে তোলে সেখানে আত্মীয়তা করছে। জঙ্গিরা তাদের স্ত্রী-সন্তানদেরও জঙ্গিবাদের কাজে সম্পৃক্ত করছে। সেজন্য আমাদের এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। আমরা প্রত্যেকে যে যেখানে থাকি প্রতিবেশীর উপর নজর রাখবো। বাসা-বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সকল ধরনের তথ্য সংরণে রাখবো এবং তাদের ব্যাপারে সার্বণিক খোঁজ খবর রাখবো। কারো গতিবিধি সন্দেহজনক হলে তাকে নজরদারিতে রাখতে হবে। এলাকায় কোনো অপরিচিত লোকের আনাগোনা দেখলে তার উপর দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার নিজ নিজ ওয়ার্ডে জনগণকে প্রতিনিয়ত সতর্ক থাকতে বলবেন। প্রত্যেক বাড়ির মালিককে বলতে হবে ভাড়াটিয়াদের ঘরে গিয়ে অন্তত মাসে দুই দিন তাদের সাথে খোশগল্প করে সময় কাটানো। যাতে আপত্তিকর কিছু থাকলেও যেনো তা বাড়ির মালিকের চোখে পড়ে। মনে রাখতে হবে, যে বাসা-বাড়িতে কোনো দুষ্কৃতকারী, অপরাধী অবস্থান করবে তার দায় দায়িত্ব বাড়ির মালিক কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, কাউন্সিলরদের কাঁধেও এসব ঝামেলা এসে পড়ে। তাই সকলের সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। শুধু পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর ভরসা করে থাকলে চলবে না। সকলের দায়িত্ব নিতে হবে। কারোই দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। কোনো নাশকতা ঘটলে সবাই আক্রান্ত হবে।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, জঙ্গি, মাদক, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং এসব সম্মিলিতভাবেই প্রতিরোধ করতে হয়। এগুলো একক কারো সমস্যা নয়। এসব অপরাধ সমাজকে ধ্বংস করছে, দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে। সুতরাং এসব সমাজ ও দেশবিরোধী কর্মকা-ের কুফল থেকে আমরা কেউই মুক্ত নই। আক্রান্ত হলে সকলেই এর পরিণতি ভোগ করতে হয়। চাঁদপুরে ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ ও মাদক এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। জঙ্গিবাদ এখন আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে। এটিকেও আমরা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ এবং নির্মূল করতে পারবো। তিনি আরো বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা অবস্থান করছি। দেশের এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতেই দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা জঙ্গিদের মতো ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লেলিয়ে দিয়েছে। তারা চাইছে এ দেশকে বিশ্বে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে চি?িহ্নত করতে। তাদের সেই স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না। তিনিও তাঁর পরিষদের কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপারের বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করেন।
সভায় চাঁদপুর পৌরসভায় ২০ জন কাউন্সিলর ছাড়াও পৌর সচিব, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ আরো ক’জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।