টোকাই থেকে পেশাদার চোর হওয়ার জন্য চুরি বিদ্যা শেখেন মনির হোসেন (৪০)। চুরির টাকায় জমি, বাড়ি ও দোকান করেছেন মনির। চট্টগ্রামে বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ২৮ লাখ টাকা চুরির অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর উঠে আসে মুনির হোসেনের চোর হয়ে ওঠার পেছনের গল্প।
শনিবার (২২ মে) চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনি থেকে মনির হোসেন ও স্ত্রী খুকু মনিকে (২৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মনিরের সহযোগী অটোরিকশাচালক মো. মাহফুজকেও (৩০)।
মনিরের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ায় হলেও দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাস করেন।
পুলিশের ভাষ্য, মনিরের চুরির ধরন অন্যসব চোরদের চেয়ে আলাদা। সে বাসাবাড়িতে নয়, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই মনিরের চুরির লক্ষ্য। এজন্য রাতে মাহফুজের অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়ে রেকি চালাতেন। আর পাইপ বেয়ে ভবনের উঁচু তলায় ঢোকাও রপ্ত করেন তিনি।
চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার এএসআই অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামে এসে মনির টোকাইয়ের কাজ করতো। সারাদিন ভাঙারি সংগ্রহ করে দোকানে বিক্রি করে চলতেন। সাত বছর আগে পুলিশের তালিকাভুক্ত চৌধুরী নামের এক চোরের সঙ্গে মনিরের সখ্য গড়ে ওঠে। সেই চৌধুরীর মাধ্যমেই মনির বহুতল ভবনে ঢোকা ও চুরির কৌশল রপ্ত করেন।
অনুপ বলেন, চুরি করা টাকা ভাগাভাগি নিয়ে চৌধুরীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বছর খানেক আগে আলাদা হয়ে যায় মনির। পরে সে একাই চুরি শুরু করে। মাসোহারা দিয়ে অটোচালক মাহফুজকে সাথে নেয় সে। রাত ১১টার পর থেকে মাহফুজের অটোরিকশায় করে শহরে ঘুরে বেড়ায়। মনির টার্গেট করা ভবনে ঢুকলে মাহফুজ আশেপাশে থেকে রেকি করে। পুলিশ কিংবা নিরাপত্তা প্রহরী দেখলে ফোন করে তা মনিরকে জানিয়ে দেয়।
গত ১৮ মে গভীর রাতে মনির রাত দেড়টার দিকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে চুরি করতে ঢুকেছিলেন বলে পুলিশ জানায়। সেখানে টাকার লকার খুলতে না পেরে উপরের তলায় বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্সে প্রবেশ করে দুটি গ্রিল কেটে দুই রুমে প্রবেশ করে। প্রথম রুমে কোন টাকা না পেলেও পরের রুম থেকে সে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, চুরি করতে পারলে মনির মোটা অঙ্কের ভাগ দিতেন মাহফুজকে। আর করতে না পারলে দৈনিক ৫০০ টাকা দিতেন।
খুলশী ও আকবর শাহ থানার দুটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে মনির দুই বছর কারাগারে ছিলেন। ওই সময় মাহফুজ তাকে জামিন করানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করেন।
এএসআই অনুপ জানান, মনিরের কাছ থেকে একটি রেঞ্চ উদ্ধার করা হয়েছে। মূলত সেটি দিয়ে তিনি জানালার গ্রিল ভেঙে ফেলতে পারেন। ওই রেঞ্চ দিয়ে বিভিন্ন লকার খুলতেও পারদর্শী মনির।
কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, মনির যে প্রতিষ্ঠানে চুরি করতে ঢুকতেন, সেখান থেকে খালি হাতে বের হতেন না। গত বছর মনির চকবাজার এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে চুরি করতে ঢুকে। সেখানে টাকা না পেয়ে বের হওয়ার সময় দুধ, ঘি চুরি করে নিয়ে যায়।
যে মনির এক সময় বাতিল মালের দোকানে কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসপত্র বিক্রি করতেন, চুরি করে টাকা পেয়ে নিজেই একটি ভাঙারি দোকান দিয়েছেন। চুরির টাকায় আকবর শাহ বিশ্ব কলোনিতে যে জায়গায় মনির থাকে, সেটি কিনেছে। সেখানে পাঁচটি সেমিপাকা ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে মনির পুলিশকে বলেছেন, গত রমজান মাসে তিনি কোনো চুরি করেননি। প্রতি রমজানেই তিনি এই বিরতি দেন।