সারাদেশের জেলা কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কমিটিই পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না। কাউন্সিলও হচ্ছে না বেশিরভাগ জেলায়। বাড়ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। কেন্দ্র থেকে মীমাংসার জন্য কমিটি গঠন করা হলেও বিভেদ কমছে না। বরং তা মামলা, এমনকি সংঘর্ষে গড়াচ্ছে। সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দুই নেতার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। চলমান আন্দোলন-সংগ্রামে এসব ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দলের সিনিয়র নেতাদের।
নেতাকর্মী বলছেন, কমিটি গঠন নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আন্তরিক কিংবা কঠোর হয়েও ফল পাচ্ছেন না। দলের প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সৃষ্ট কোন্দলের কারণে সময়মতো কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না। আবার হাইকমান্ডের নির্দেশনায় তড়িঘড়ি করে যেনতেন কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এতে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে; সঙ্গে কোন্দলও। সাংগঠনিক স্থবিরতার জন্য তৃণমূল নেতাকর্মী হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীর গতিকেও দায়ী করছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দলকে তৃণমূল থেকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ প্রক্রিয়ায় তিনি সারাদেশের সাংগঠনিক অবস্থা জানার জন্য বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের দেওয়া রিপোর্টের আলোকে দফায় দফায় জেলার নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন। তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব তুলে আনার জন্য কাউন্সিল প্রক্রিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে সারাদেশে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন তিনি।
জানা গেছে, সারাদেশে বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। বেশিরভাগ কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০১৯ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৭১টি কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। তবে সবটাতে আহ্বায়ক কমিটি করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়েছেন নেতারা। মাত্র ১০টি জেলার কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু জেলার কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়নি। কোনো কোনো জেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রমে কমিটি পুনর্গঠনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
আহ্বায়ক কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিল আয়োজন করে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো জেলাই নতুন কমিটি গঠন করতে পারেনি। বরং অনেক জেলায় কোন্দল চরম মাত্রা লাভ করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে তিনি কিছু বলবেন না। সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া জানান, ওই ঘটনা অরাজনৈতিক ও অসাংগঠনিক। এটা খুব দুঃখজনক। দলের সিনিয়র নেতাদের সামনেই ঘটনাটা ঘটেছে। এর বেশি কিছু তাঁর বলার নেই।
এভাবে প্রায় সব জেলাতেই কমিটি নিয়ে চলছে চরম অস্থিরতা। বরিশাল জেলাতেও কমিটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দুই অংশ। এর একটি অংশের নেতারা আদালতের শরণাপন্ন হতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। অপরদিকে চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। অডিও-ভিডিও রেকর্ড ছাড়াও বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত তুলে ধরে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। মাঝেমধ্যেই ঘটছে সংঘর্ষ। এসব ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা জেলা কমিটি গঠন নিয়েও চলছে বিতর্ক। কমিটি গঠনে কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের ঘটনা তদন্ত করছে দল। ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন কমিটি গঠনেও চলছে তুঘলকি কাণ্ড। একেক কমিটিতে ৭-৮ জনকে দেওয়া হচ্ছে ‘সাইনিং পাওয়ার’ বা স্বাক্ষর ক্ষমতা। এতে কমিটি গঠনে হযবরল অবস্থা হচ্ছে। আবার অখ্যাত, নিষ্ফ্ক্রিয় নেতাদের পদায়ন নিয়েও চলছে অসন্তোষ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দল পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেসব জেলার কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ সেখানে কাজ চলছে। নতুন কমিটি গঠন করা হচ্ছে। বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্ব পেতে প্রতিযোগিতা অনেক। সবাই ত্যাগী ও নির্যাতিত। সবাই যোগ্যও। সবার বিরুদ্ধে মামলা-হামলা রয়েছে। তাই কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেউ বাদ পড়লে কষ্ট পাবেন- এটাই স্বাভাবিক। এটা ঠিক হয়ে যাবে।
কামরুল হাসান,সমকাল।