হামলা-গ্রেফতার করে আন্দোলনকে দমানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি, একটি সন্ত্রাসী শক্তি। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের যে অধিকার তা হরণকারী শক্তি। আওয়ামী লীগ অতীতেও একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। এখনো তারা একই উদ্দেশ্যে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির সমাবেশে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে রোববার ঢাকা মহানগরসহ সব মহানগর ও জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি জানান, ওইদিন রাজধানীতে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরের মিরপুরে বিএনপির সমাবেশে হামলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার পল্লবী জোনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশের জন্য যখন মঞ্চ তৈরি ও মাইক লাগানো হচ্ছিল, ঠিক তখনই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাঠি নিয়ে মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে আক্রমণ করে। এই আক্রমণের ফলে বিএনপির প্রায় ৭৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন ৮ জন। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এভাবে সন্ত্রাসী হামলা-আহত-হত্যা ও গ্রেফতার-মিথ্যা মামলা দিয়ে কখনোই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। বিএনপিকে রাজপথ থেকে সরানো যাবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মিরপুরের পল্লবীতে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল ডি ব্লকের ঈদগাহ মাঠে। পুলিশ আপত্তি করার পর আমাদের নেতারা এটাকে পরিবর্তনে আরও ২টি জায়গার কথা বলেছিলেন। পল্লবী পুরাতন থানার সামনে অথবা পল্লবী কাঁচাবাজারের সামনে মুকুল ফৌজ মাঠে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ কর্তৃপক্ষ মুকুল ফৌজ মাঠে দুপুর ১টায় সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। যখন আমাদের কর্মী ভাইয়েরা মঞ্চ তৈরি করছিলেন, ঠিক তখনই এ হামলা চালানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক ও ভয়াবহ কাণ্ড হচ্ছে আক্রমণকারীদেরকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা যখন দাঁড়িয়ে থাকে, তখন নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও শেষে বন্দুক দিয়ে গুলিবর্ষণ করে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, পুলিশের ভূমিকা হওয়া উচিত রক্ষা করা। পুলিশের ভূমিকা হওয়া উচিত নিরপেক্ষ থাকা। কিন্তু পুলিশ পুরোপুরিভাবে এ হামলাকারীদের তথা আওয়ামী লীগের ও সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রকামী যে আন্দোলন তাকে নস্যাৎ করার জন্য কাজ করছে। আমরা মনে করি, পুরোপুরিভাবে উস্কানি দিয়ে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করা, বিরোধী দলকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া এবং নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তারা এই কাজগুলো করছে।’
‘বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই সন্ত্রাস করছে’ অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিদিন আওয়ামী লীগের নেতারা বলতে চান, বিএনপি এ সন্ত্রাসী হামলা করছে। অথচ পুরো সন্ত্রাসটা করছে আওয়ামী লীগ। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশে যেন গণতন্ত্র না থাকে, দেশে যেন সেরকম কোনো পরিবেশ না থাকে, যে পরিবেশে সত্যিকার অর্থেই একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের। সেই পরিস্থিতিকে তারা পুরোপুরি নস্যাৎ করে দিতে চায়।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আক্রমণ করেছে। এসব আক্রমণ করে কোনো লাভ হবে না। ঢাকায় যে কর্মসূচি তা চলবে। যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যে এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
‘যুবলীগের তাজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী, রুপনগর থানা আওয়ামী লীগের রজ্জব আলী, কাশেম মোল্লা, তুহিন, শেখ মান্নান, মো. লিটু, সালাহউদ্দিন রবিন, ইসহাক মিয়া, মোবাশ্বের চৌধুরী, তোফাজ্জল হোসেন টেংগু, জাকির হোসেন, মো. খোকন, মো. ইব্রাহিম, খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে মিরপুরে সশ্বস্ত্র হামলা হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘মাঠে আমরা এখনো নামি নাই, নামছি। মাঠ থেকে গুলি করে মৃত্যু হলেও আমাদেরকে উঠাতে পারবে না। সরকারকে চিন্তা করতে হবে তারা লাশ চায়, না অন্য কিছু চায়।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, মহানগর উত্তরের আমিনুল হক, দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন প্রমুখ।