চাঁদপুরে আলু সংরক্ষণের বিভিন্ন হিমাগারগুলো এখন একটু চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বৈরী আবহাওয়া কেটে যাওয়ার ফলে কৃষকরা মাঠ থেকে পচা আলু বাদ দিয়ে যেটুকু ভালো আলু পাওয়া যাচ্ছে সেইগুলো হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য নিয়ে আসছে। চাঁদপুর বিসিক শিল্প নগরীর মনোহরখাদীর কোল্ড স্টোরেজের ও এ্যাপোলো কোল্ডস্টোরে গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিকআপ ও ট্রাক ভর্তি করে চাষীরা আলু সংরক্ষণের জন্য নিয়ে আসছে। মনোহরখাদী কোল্ড স্টোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আমিন সিদ্দিকী জানান, অতি বৃষ্টির কারণে আলুর পঁচন ধরেছে। চাঁদপুর সদরের বিভিন্ন এলাকার কয়েক ৩ হাজার একর জমির আলু চাষীরা জমি থেকে আলু তুলতে চাচ্ছে না। কারণ হলো জমি থেকে আলু তুলে ১০ ভাগ আলুও ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় ৯০ ভাগ আলুই ৩ দিনের বৃষ্টিতে জমিতেই পচে মাটির সাথে মিশে গেছে। এখন যে পরিমাণ আলু চাষীরা মাঠ থেকে সংগ্রহ করতে পারছে সেগুলো রোদে শুকিয়ে হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য নিয়ে আসছে। আমরা চাষীদেরকে পূর্বেই বলে দিয়েছি ভেজা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করা যাবে না। তবে আমরা এখন হতাশাগ্রস্থ। আমাদের হিমাগারে যে পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করার কথা সেই পরিমাণ আলু আমরা পাচ্ছি না।
আলু শুকিয়ে হিমাগারে পাঠানো হচ্ছে
গত ৯ মার্চ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে চাঁদপুর জেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমির আলু ও অন্যান্য ফসল একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আলু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চাষীরা এখন মাঠ থেকে আলু তুলতে পর্যন্ত চাচ্ছে না। এর কারণ হলো গত ৩ দিনের বৃষ্টিতে জমিতেই আলুর পচন ধরেছে। বৈরী আবহাওয়া কেটে যাওয়ায় এখন কৃষকরা কাদাময় মাটি থেকে আলু তুলে মাঠের মধ্য্ইে শুকাচ্ছে। শুকনো আলুগুলো পাটের বস্তা ভর্তি করে হিমাগারগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। আবার অনেক আলু চাষী বস্তা ভর্তি করে এখনো মাঠের মধ্যে ও রাস্তার পার্শ্বে স্তুপ করে রেখেছে। আবার কেউ কেউ আলুগুলো বস্তাজাত না করেই খোলা মাঠের মধ্যে বিছিয়ে রেখেছে।
গতকাল চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণপুর ও মৈশাদী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা নিজেরাই লাঙ্গল দিয়ে আলুর সারির কেইলগুলো খুদে মাটির নিচ থেকে আলুগুলো তুলছে। এসব আলু শুকানোর জন্য তক্ত রোদের মধ্যে বিছিয়ে রেখেছে। এখন পর্যাপ্ত রোদের তাপের কারণে আলু চাষীরা এসব আলু হিমাগারে রক্ষনা বেক্ষনের জন্য রোদে শুকিয়ে নিচ্ছে। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়েকজন চাষীর সাথে আলাপ করলে তারা জানান ১০/১২ কানি সম্পত্তিতে আলু চাষ করেছে। যখন আলুগুলো তোলার সময় ছিল তখনই হঠাৎ বৃষ্টির কারণে জমির মধ্যেই আলু নষ্ট হয়ে যায়। এখন যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল তার চেয়ে অনেকগুণ কম আলু উৎপন্œ হয়েছে। আমরা হিমাগারে রাখার জন্য ভালো আলুগুলো বেছে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছি। এর কারণ হলো হিমাগার কর্তৃপক্ষ ভেজা আলুর বস্তা কখনই মজুদ রাখবে না। যার জন্য যেটুকু ভালো পাওয়া গিয়েছে সেই আলুগুলোই রোদে শোকানো হচ্ছে। তারা আরো জানান চটের বস্তা ভর্তি করে যে পরিমাণ আলো শুকানো হয়েছে তা মজুদ করে রাখা হয়েছে। এগুলো আজকালের মধ্যেই চাঁদপুর ও আশপাশের এলাকার হিমাগারগুলোতে সংরক্ষণের জন্য পাঠানো হবে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় চলতি মৌসুমে আলুর আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ১শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭শ’ ৬০ মেঃ টন। অসময়ের বৃষ্টি এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র দাস জানান, গত ৯ মার্চ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত অতি বৃষ্টির কারণে চাঁদপুর সদর উপজেলার ২শ’ ২০ হেক্টর জমি, মতলব উত্তর উপজেলার ২০ হেক্টর জমি, মতলব দক্ষিণ উপজেলার ১শ’ হেক্টর জমি, হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫শ’ ৮৫ হেক্টর জমি, কচুয়া উপজেলার ৩শ’ ৫ হেক্টর জমি, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫ হেক্টর জমি ও হাইমচর উপজেলার ১২ হেক্টর জমির আলু চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ কয় উপজেলার ৭শ’ ৯২ হেক্টর জমির আলু সম্পূর্ণভাবে বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে।